অনলাইন ডেস্ক :
চীন জানিয়েছে, তারা কথিত বিচ্ছিন্নতাবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে তাইওয়ানের একজন রাজনীতিকের বিচার করবে। চীনের মূল ভূখন্ডে তাইওয়ানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এটি এ ধরনের সর্বশেষ পদক্ষেপ। তাইওয়ানের একটি স্বাধীনতাপন্থী রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াং চিহ-ইউয়ানকে গত বছর চীনে আটক করা হয়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চীন একজন বই প্রকাশক এবং তাইওয়ানের একটি সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মরত সাংবাদিকদেরও আটক করে। এ রকম ‘নির্বিচার’ গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে তাইওয়ান জানিয়েছে, এগুলো মানবাধিকারের জন্য ‘খুবই ক্ষতিকর’।
সর্বশেষ মামলাটি ইয়াংকে নিয়ে, যিনি মূলত তাইওয়ানে থাকেন এবং সেখানে তাইওয়ানিজ ন্যাশনাল পার্টি নামে একটি দল গঠন করেন। অজ্ঞাত কারণে ৩২ বছর বয়সী এই রাজনীতিক গত বছর চীন সফর করেন। এরপর অগাস্ট মাসে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ওয়েনঝুতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ‘বিচ্ছিন্নতাবাদের’ অভিযোগে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে ঘিরে তীব্র উত্তেজনা চলছিল এবং তখন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ বিরুদ্ধে চীন দমন অভিযান চালাচ্ছিল। তার গ্রেপ্তার এর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়। গত মঙ্গলবার চীনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ইয়াং চিহ-ইউয়ানের ব্যাপারে একটি তদন্ত শেষ করেছে এবং তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করেছে।
চীনের সরকারি গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হচ্ছে ‘এই ব্যক্তির মন অনেক দিন ধরেই তাইওয়ানের স্বাধীন বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তাধারায় দূষিত হয়ে গেছে’ এবং তাইওয়ানকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য ‘ষড়যন্ত্র করছিল’। তাইওয়ানের স্বাধীনতার জন্য এবং একত্রীকরণকে প্রত্যাখ্যানের জন্য তিনি নিজের দলের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে অনেকগুলো অনুষ্ঠানের ‘সক্রিয় পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে’ জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। ইয়াং হংকং এর স্বাধীনতার পক্ষেও কথা বলেছিলেন অন্যান্য ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ শক্তির সঙ্গে মিলে। চীনে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদের’ ইস্যুটি খুবই স্পর্শকাতর, কারণ তারা তাইওয়ানকে তাদের দেশের এক বিচ্ছিন্ন প্রদেশ বলে গণ্য করে, যেটি একদিন আবার বেইজিং এর নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসবে।
মঙ্গলবার তাইওয়ানের একটি সরকারি দপ্তর ‘মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল’ জানিয়েছে, তারা বার বার ইয়াংকে মুক্তির জন্য দাবি জানিয়েছে, কিন্তু চীনের দিক থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া পায়নি। এ মাসের শুরুতেই তাইওয়ান-ভিত্তিক এক পুস্তক প্রকাশক লি ইয়ানহে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন, তারপর এখন ইয়াং এর বিচারের খবর আসলো। চীনের কর্তৃপক্ষ লির মামলার ব্যাপারে কোন বিস্তারিত তথ্য জানায়নি। তার কথিত গ্রেপ্তারের খবর প্রথম পাওয়া যায় তার বন্ধুদের মাধ্যমে। লি, যিনি তার লেখক নাম ফুচা নামেই বেশি পরিচিত, তিনি চীনে জন্ম গ্রহণ করলেও ২০০৯ সালে তাইওয়ান চলে যান। সেখানে তিনি গুসা প্রেস নামে প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
এই প্রকাশনা সংস্থা এমন সব বই প্রকাশ করতো যাতে বেইজিং এর সমালোচনা থাকতো। লির বন্ধুরা জানান, এ মাসের শুরুতে তিনি চীনে আসেন তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে, সেই সঙ্গে কিং মিং নামে পরিচিত এক উৎসবে যোগ দিতে। তাইওয়ানের মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল গত সপ্তাহে জানিয়েছিল, লি নিরাপদে আছেন এবং সরকার তার বিষয়টির ওপর নজর রাখছে, তবে এর বেশি কিছু আর জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
লির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটিকে তুলনা করা হয় ২০১৫ সালে হংকং এর পাঁচজন বই বিক্রেতার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার সঙ্গে। ঐ ঘটনাতেও দোকানটিতে চীনের সমালোচনামূলক বই বিক্রি হতো। পরে এদের শেষ পর্যন্ত চীনের মূল ভূখন্ডের কর্তৃপক্ষের হেফাজতে দেখা গিয়েছিল। তাদের প্রকাশনা ব্যবসা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছিল। এদিকে কয়েক ডজন লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক কর্মী ইয়াং চিহ-ইউয়ানকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
তাইওয়ানের বৈদেশিক সংবাদদাতাদের ক্লাব সোমবার জানিয়েছে, চীনের উচিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সম্মান করা যেটি তাদের সংবিধানে লেখা আছে এবং অন্যায়ভাবে আটকে রাখা গণমাধ্যম কর্মীদের মুক্তি দেয়া। এ মাসে তাইওয়ান ভিত্তিক ইবিসি নিউজের দুই রিপোর্টারকেও চীনের কর্তৃপক্ষ আটক করে। এই দুই রিপোর্টার চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের পিংটানে সামরিক মহড়ার দৃশ্য ভিডিও করছিলেন। স্থানীয় গণমাধ্যমে এই দুই রিপোর্টারকে তাদের নামের শেষ অংশ হুয়াং এবং লি বলে চিহ্নিত করা হয়। তারা দুইজনেই নিরাপদে আছেন বলে জানা গেছে এবং তারা তাদের কোম্পানির এক পরিচালকের সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ করেন। তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার তাদের দেশের নাগরিকদের চীন সফরে যাওয়ার আগে ‘সম্ভাব্য ঝুঁকি’ সম্পর্কে সচেতন করে দিয়েছে। একজন মুখপাত্র জানান, ‘চীনের মূল ভূখ-ে যে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা যখন-তখন বিঘিœত হয়, এটা আপনাদের বোঝা উচিৎ।’
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু