নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে তীব্র গ্যাস ঘাটতি বিরাজ করছে। কিন্তু তার মধ্যেও এগিয়ে চলেছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ। ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাসের যোগান কোথা থেকে আসবে তাও কেউ বলতে পারছে না। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলো ওসব গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। তাছাড়া বিদেশী দাতা সংস্থার সহায়তায় যৌথ বিনিয়োগেও নির্মাণ পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ আগামী ৫ বছরের মধ্যে ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এমন উদ্যোগকে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। তাদের মতে, এমনিতেই দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্ধেকের বেশি সক্ষমতার জ্বালানি সংস্থান করা যাচ্ছে না। তার মধ্যে গ্যাস ঘিরে ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা অযৌক্তিক। বিদ্যুৎ বিভাগ এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ১১ হাজার ৪৭৬ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু গ্যাস সঙ্কটে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এমন অবস্থার মধ্যেই সরকার গ্যাস এবং আমদানি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর ভর করে আরো প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা করেছে। ইতোমধ্যে ৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে এবং বাকি ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সমীক্ষার কাজ চলমান।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মালিকানায় ১ হাজার ৫৭৫ মেগাওয়াট এবং বিপিডিবি ও মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি জিইর (জেনারেল ইলেকট্রিক) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী ২০২৫ সাল থেকে শুরু করে ২০২৮ সাল নাগাদ ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। বিপিডিবির গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে হরিপুরে ২৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, নরসিংদীর ঘোড়াশালে একই প্রযুক্তির ২২৫ মেগাওয়াট, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ৫৫০ মেগাওয়াট, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৫৫০ মেগাওয়াট। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বিপিডিবির উদ্যোগে পরিকল্পনাধীন ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা। আগামী এক বছরের মধ্যে ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে চূড়ান্ত প্রস্তাব বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো হবে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসভিত্তিক প্রায় সাড়ে ১১ হাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে। ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে দৈনিক ৮৫ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। গ্যাস সঙ্কটে ৭ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। গ্যাসের কারণে বন্ধ থাকা ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জায়গায় উচ্চ উৎপাদন খরচের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হচ্ছে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে গ্যাসভিত্তিক প্রায় ২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাসের সংস্থান করা যাচ্ছে না। গ্যাস লাইন নির্মাণ করা হলেও কীভাবে গ্যাস দেয়া যায় তার হিসাবনিকাশ চলছে। বর্তমানে দেশে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে ২২ হাজার মেগাওয়াট। তার মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৫১ শতাংশ। গত ১০ বছরে দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। ক্রমবর্ধমান হারে গ্যাসের সঙ্কট তৈরি হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ওসব জায়গায় ফার্নেস অয়েল, ডিজেল ও কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। অথচ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কাছেও ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংস্থান নিশ্চিত নয়।
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক জ্বালানির বাজার প্রেক্ষাপট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেই গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। আগামীতে জ্বালানি বাজার কোনদিকে যাবে তা অনিশ্চিত। পাশাপাশি স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানে গতি যৎসামান্য এবং বিশ্ববাজারেও গ্যাসের উচ্চমূল্য। আর পেট্রোবাংলা গ্যাস কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে সব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। কারণ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে বাণিজ্যিক সুফল পাওয়া না গেলে তা ভালো হবে না।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিদ্যুতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন জানান, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরে অন্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা চ্যালেঞ্জিং। অন্য জ্বালানির তুলনায় গ্যাসই সহজলভ্য এবং তুলনামূলক সাশ্রয়ী। গ্যাসের সংকট রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ চাহিদা বিবেচনায় জ্বালানি আমদানি করেই ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আর যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা করা হয়েছে সেগুলোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হিসাব করলে ওই সময়ে অনেকগুলো গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে যাবে। ওই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন আর এগুলো বাদ দেয়ার পর্যায়ে নেই।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ