অনলাইন ডেস্ক :
ডারবান টেস্টের শেষ দিনে কেশভ মহারাজ ও সাইমন হার্মারের স্পিনের বিপক্ষে নূন্যতম লড়াইটুকুও করতে পারল না বাংলাদেশ। ম্যাচ এগিয়ে নেওয়ার চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা দেখাতে পারলেন না কেউই। তাতে পঞ্চম ও শেষ দিনে স্রেফ ৫৫ মিনিটেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। দিনের একেবারে শুরু থেকে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওযায় ৫৩ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। মুমিনুল হকের দল প্রথম টেস্ট হেরেছে ২২০ রানে। ২৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের এই রান কিংসমিডের সর্বনিম্ন। এই মাঠে ১৯৯৬ সালে ভারতের ৬৬ ছিল আগের সর্বনিম্ন। ৩২ রানে ৭ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের গুঁড়িয়ে দিয়েছেন মূলত বাঁহাতি স্পিনার মহারাজ। অফ স্পিনার হার্মার ৩ উইকেট নিয়েছেন ২১ রানে। আগের দিনের খেলা শেষে খালেদ মাহমুদ বলেছিলেন, বাংলাদেশ খেলবে জয়ের লক্ষ্যে। সেটা তো দূরের কথা, শেষ দিনে সফরকারীদের কেউ ক্রিজে এসে দাঁড়াতেই পারল না। বোলারই পরিবর্তন করতে হয়নি ডিন এলগারকে। দুই স্পিনার মহারাজ ও হার্মার এদিন ১৩ ওভারের মধ্যে গুটিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের ইনিংস। দুই দিন মিলিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস স্থায়ী হয়েছে কেবল ১৯ ওভার। টেস্টে তাদের এর চেয়ে ক্ষণস্থায়ী ইনিংস আছে কেবল একটি। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংস টিকেছিল ১৮.৪ ওভার। মহারাজের প্রথম তিন ওভারে ৩ উইকেট হারানোয় একপর্যায়ে সেই ইনিংসে করা ৪৩ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা জেগেছিল। সেটিকে ছাড়িয়ে করা এই ৫৩ টেস্টে এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। চতুর্থ ইনিংসের হিসেবে অবশ্য এটাই এখন তাদের সর্বনিম্ন। আগেরটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই, ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রুম টেস্টের ৯০। ‘আনপ্লেয়েবল’ বলে আউট হননি কেউই। অনেক টার্ন করেছে, অনেক নিচু হয়েছে এমনটাও ঘটেনি। বনের নয়, মনের বাঘই যেন খেয়েছে বাংলাদেশকে। সবচেয়ে অভিজ্ঞ যিনি সেই মুশফিকুর রহিম বিদায় নেন সবার আগে, সোমবার (৪ঠা এপ্রিল) দিনের প্রথম ওভারে। রাউন্ড দা উইকেটে করা মহারাজের বলটি একটু ড্রিফটের সঙ্গে পিচ করে টার্ন না করে সোজা হয়ে ঢোকে ভেতরে। ভুল লাইনে ব্যাট পেতে দিয়ে বলের নাগাল পাননি মুশফিক, ফেরেন এলবিডব্লিউ হয়ে। লিটন দাসের আউট হওয়া বলটিও আহামরি কিছু ছিল না। মহারাজের অফ স্টাম্পে ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ফ্লিক মাটিতে রাখতে না পারায় ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যান ধরা পড়েন মিড উইকেটে। মহারাজের ফ্লাইটেড ডেলিভারি সামনে টেনে আনে ইয়াসির আলিকে। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করেন তিনি। কিন্তু ভুল অ্যাঙ্গেলে ব্যাট নেমে আসায় বলের নাগাল পাননি, হয়ে যান বোল্ড। তিনি মহারাজের পঞ্চম শিকার। বাঁহাতি স্পিনার টানা তিন ওভারে তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের লড়াইয়ের আশা প্রায় শেষ করে দেন। এরপর শিকারে যোগ দেন হার্মার। প্রথম ইনিংসে লড়াই করা মেহেদী হাসান মিরাজ খুলতে পারেননি রানের খাতা। হার্মারের অফ স্পিনে তিনি ধরা পড়েন স্লিপে। নিয়মিত উইকেট পতনের মধ্যে লড়াই করছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। চমৎকার এক ডেলিভারিতে তাকে স্টাম্পড করে দেন হার্মার। এরপর লেজটুকু দ্রুত মুড়িয়ে দেন মহারাজ। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই প্রথম ¯্রফে দুই বোলার শেষ করে দিলেন কোনো ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকাও পারল প্রথমবার। এতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা মহারাজ জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। আগামী বৃহস্পতিবার পোর্ট এলিজাবেথে শুরু হবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৩৬৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৯৮
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৭৪ ওভারে ২০৪ (এরউইয়া ৮, এলগার ৬৭, পিটারসেন ৩৬, বাভুমা ৪, রিকেলটন ৩৯*, ভেরেইনা ৬, মুল্ডার ১১, মহারাজ ৫, হার্মার ১১, উইলিয়ামস ০, অলিভিয়ের ০; খালেদ ১৩-১-৩৩-০, মিরাজ ৩৫-৬-৮৫-৩, শান্ত ১-০-৩-০, ইবাদত ১৩-১-৪০-৩, মুমিনুল ১-১-০-০, তাসকিন ১১-১-২৪-২)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৯ ওভারে ৫৩ (আগের দিন ১১/৩) (শান্ত ২৬, মুশফিক ০, লিটন ২, ইয়াসির ৫, মিরাজ ০, তাসকিন ১৪, খালেদ ০, ইবাদত ০*; মহারাজ ১০-০-৩২-৭, হার্মার ৯-৩-২১-৩)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ২২০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: কেশভ মহারাজ
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা