April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, July 10th, 2022, 2:11 pm

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সারাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে

ছবি: মঈন আহমেদ

সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে প্রার্থনা এবং পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুসলমানরা রবিবার তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা উদযাপন করছে।

সারাদেশের মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে মুসল্লিরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির প্রার্থনা করেন।

রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

আল্লাহর নামে কোরবানির পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভালবাসা প্রদর্শনের জন্য নবী ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কুরবানী দিতে উদ্যত হন। এতে সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ ইব্রাহীম (আ.) কে তার খলিল (বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করেন। এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিমরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি উদ্‌যাপন করেন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পৃথক ঈদ বাণীতে দেশবাসীকে আত্মত্যাগের চেতনায় একাত্ম হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে, গতবারের মতো এবারও করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করবেন মুসলমানরা। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস রোধে ধর্ম মন্ত্রণালয় ৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে।

নির্দেশনাগুলো হলো-পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে কোনো ধরনের আলোকসজ্জা করা যাবে না। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওযু করে ঈদগাহে ও মসজিদে আসতে হবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদ ও ঈদগাহের ওযুখানায় সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।

ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে। মসজিদ অথবা ঈদগাহে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে নামাজে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

নির্দেশনা বাস্তবায়নে খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর স্থগিত থাকার পর এবারও ঈদুল আযহায় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। শোলাকিয়া মাঠে ঈদের প্রথম জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় ।

অন্যদিকে, পবিত্র ঈদুল আযহা নির্বিঘ্নে উদযাপন নিশ্চিত করতে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

শনিবার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল মো. কামরুল হাসান জানান, ঈদের দিন রাজধানীতে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যদিও আমাদের কাছে ঈদ উপলক্ষে সম্ভাব্য কোনো সন্ত্রাসী হামলার সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য নেই, তবুও আমরা কোনো ছাড় নিচ্ছি না।’

র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের লোকজন শনিবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও পরিদর্শন করেছে। আমরা গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের ওপরও নির্ভর করছি।’

তিনি আরও বলেন, রাজধানীর ঈদগাহসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট এবং এলিট ফোর্সের ডগ স্কোয়াডকেও কাজে লাগানো হবে।

এদিকে র্যাব কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং ফুট ও মোবাইল টহল ইউনিট হাই অ্যালার্টে রয়েছে।

এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হবে এবং আমরা নজরদারি রাখতে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যববহার করব।’

তিনি আরও বলেন, শোলাকিয়া ঈদগাহসহ বিভিন্ন ঈদগাহে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে এবং আমাদের এয়ার উইংও দায়িত্ব পালনে সক্রিয় থাকবে।

সকল মহানগরী ও জেলা-উপজেলাযর প্রবেশপথে বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হবে বলেও জানান তিনি।

শনিবার বেলা ১১টা থেকে পশুহাটের বর্জ্য অপসারণ শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং রবিবার দুপুর ২টা থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ শুরু হবে। এ কাজে মোট ৯ হাজার ৫০ জন শ্রমিক নিয়োজিত থাকবে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এদিকে ঈদের দ্বিতীয় দিনের মধ্যে কোরবানি সম্পন্নের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করি যে, অনেকেই ঈদের তৃতীয় দিনে কোরবানির পশু জবাই করে থাকেন। আমরা বিনীতভাবে নিবেদন করছি -তৃতীয় দিনের অপেক্ষায় যাতে কেউ না থাকেন। ঈদের দ্বিতীয় দিনের মধ্যেই যেন সকলেই কোরবানি সম্পন্ন করেন। কারণ বর্জ্য অপসারণে আমরা একটানা দীর্ঘ ৭২ ঘণ্টা কাজ করব। সেজন্য তাদেরও বিশ্রাম প্রয়োজন রয়েছে, ঈদের ছুটির প্রয়োজন রয়েছে।’

—ইউএনবি