কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থা ও দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের পর অবশেষে শনিবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে পদত্যাগ করার কথা জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, নতুন সরকার গঠিত হলেই তিনি পদ ছাড়বেন।
এর কয়েক ঘণ্টা পরে পার্লামেন্টের স্পিকার বলেছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে বুধবার পদত্যাগ করবেন।
এর আগে শুক্রবার রাতে পুলিশ কারফিউ জারি করে বিক্ষোভ বন্ধ করতে চেয়েছিল, কিন্তু বিরোধীদল ও আইনজীবীদের তীব্র নিন্দার মুখে এটি তুলে নেয়া হয়।
এরপর কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানী কলম্বোতে প্রবেশ করে এবং রাজাপাকসের সুরক্ষিত বাসভবনে ঢুকে পড়ে। এসময় সংঘর্ষে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩৪ জন আহত হয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, উত্তাল জনতা রাজাপাকসের বাগানের পুলে ডুব দিচ্ছে। কিছু লোক বাড়ির বিছানায় শুয়েছিল, অন্যরা চা খাচ্ছে এবং প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে একটি সম্মেলন কক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করছে।
রাজাপাকসে সেসময় সেখানে ছিলেন কিনা তা পরিষ্কার জানা যায়নি।
সরকারের মুখপাত্র মোহন সমরানায়েক বলেন, প্রেসিডেন্টের গতিবিধি সম্পর্কে তার কাছে কোনও তথ্য নেই।
এছাড়া বিক্রমাসিংহের অফিস জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাসভবনে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তবে হামলার সময় প্রধানমন্ত্রী সেখানে ছিলেন কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।
স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ার্দেনা একটি টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি রাজাপাকসেকে জানিয়েছিলেন যে সংসদীয় নেতারা দেখা করেছেন এবং তাকে অফিস ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপর প্রেসিডেন্ট এ সিদ্ধান্তে (পদত্যাগে) রাজি হয়েছেন।
আবেবর্দেনা আরও বলেন, তবে ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর নিশ্চিত করতে রাজাপাকসে সাময়িকভাবে (আরও কিছুদিন) থাকবেন।
আবেবর্দেনা বলেন, ‘তিনি আমাকে দেশকে জানাতে বলেছেন যে তিনি ১৩ তারিখ বুধবার পদত্যাগ করবেন। কারণ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করার প্রয়োজন আছে।’
স্পিকার আরও বলেন, ‘অতএব দেশে আর অশান্তির প্রয়োজন নেই এবং একটি মসৃণ ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য আমি দেশের স্বার্থে সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিরোধী আইনপ্রণেতা রউফ হাকিম বলেছেন, সংসদের স্পিকারকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে তার নিজের আসন্ন পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তিনি বলেন নতুন সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করবেন না।
বিক্রমাসিংহে আরও বলেন, ‘এখন আমাদের দেশে জ্বালানি সংকট ও খাদ্য সংকট। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান আমাদের এখানে আসছেন এবং আইএমএফের সাথে আমাদের বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা আছে।’
গত মে মাসে রাজাপাকসে বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন; এই আশায় যে অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ তার কূটনীতি ও যোগাযোগ দক্ষতা দিয়ে ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করবেন। কিন্তু জ্বালানি, ওষুধ ও রান্নার গ্যাসের ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় এবং তেলের মজুদ কমে যাওয়ায় জনগণের ধৈর্য্য কমে যায়।
দেশটি ভারত ও অন্যান্য দেশের সাহায্যের ওপর নির্ভর করে টিকে আছে। দেশটির নেতারা এখনও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে একটি বেলআউট নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছেন৷
কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভ দুই দশকের বেশি সময় ধরে শ্রীলঙ্কাকে শাসন করা রাজাপাকসের রাজনৈতিক রাজবংশকে ভেঙে দিয়েছে। এই পরিবারের বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর গত মে মাসে প্রেসিডেন্টের বড় ভাই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তখন তাকে একটি নৌ ঘাঁটিতে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
শনিবার অনেক বিক্ষোভকারী বাস ও ট্রেনে করে রাজধানীতে যায় এবং অন্যরা সাইকেল ও পায়ে হেঁটে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান, আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর, অন্যরা সামান্য আহত হয়েছে।
বেসরকারী মালিকানাধীন সিরাসা টেলিভিশন জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে বিক্ষোভ কভার করার সময় পুলিশের হাতে মারধরের শিকার হয়ে চারজন সাংবাদিকসহ চ্যানেলটির অন্তত ছয়জন কর্মী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
দেশটির বিক্ষোভকারী ও ধর্মীয় নেতারা বলছেন রাজাপাকসে তার ম্যান্ডেট হারিয়েছেন এবং তার যাওয়ার সময় এসেছে।
একজন বিশিষ্ট বৌদ্ধ নেতা ওমালপে সোবিথা ভেন বলেছেন, ‘তাকে (গোতাবায়া রাজাপাকসে) সিংহলের বৌদ্ধরা ভোট দিয়েছিল, যা এখন আর বৈধ নয়।
তিনি নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে সংসদ আয়োজনের আহ্বান জানান।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: বিশেষজ্ঞ
আবারও ৭২ ঘণ্টার তাপপ্রবাহের সতর্কতা
খুলনা বিভাগ ও ৬ জেলায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ