November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, December 4th, 2022, 9:58 pm

নানা পদক্ষেপেও বন্ধ করা যাচ্ছে না অনলাইন জুয়া

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এক সময়ে তাসের মাধ্যমে জুয়া খেলাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হতো, তা থেকে হাউজি, লাইভ ক্যাসিনো হয়ে এখন ঘরে বসেই মিলছে জুয়ার আসর। হাতে কেবল একটা মোবাইল ফোন থাকলেই হলো। তাই কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না অনলাইন জুয়া। এক ধরনের কৌতূহল থেকে তরুণ প্রজন্ম আকৃষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে। পাঁচ-দশ হাজার টাকার বিনিয়োগে শুরু করে লোভে পড়ে একপর্যায়ে খোয়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর জুয়ায় বিনিয়োগ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে। এদিকে শত শত সাইট বন্ধ এবং অপরাধী ধরা পড়ার পরও হাত বাড়ালেই মিলছে আরও অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম। উন্মুক্ত নেট দুনিয়া আর দেশের প্রচলিত আইনের মাঝে এর কোনো স্থায়ী সমাধান এখনও নেই সংশ্লিষ্টদের হাতে। দেশে নিষিদ্ধ বিভিন্ন ওয়েবসাইট আর অ্যাপসের মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ফুটবল, ক্রিকেট ও টেনিস খেলাসহ বিভিন্ন ম্যাচকে ঘিরে চলছে অনলাইন জুয়া খেলা। মোবাইল অ্যাপ ছাড়াও ভিভিন্ন ওয়েবসাইট, ডোমেইনের মাধ্যমে সরাসরি অনলাইন জুয়া খেলা যায়। ফেসবুক, ইউটিউবে ঢুকলেই মিলছে সেসব সাইট। জানা গেছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নির্দেশে ২০১৯ সালে বন্ধ করা হয় অনলাইনে জুয়া খেলার ১৭৬টি সাইট। ২০২২ সালে এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দেশে অনলাইনে জুয়া খেলার প্রবণতা বাড়ছে জানিয়ে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত অক্টোবরে ৩৩১টি অনলাইন জুয়ার সাইট বন্ধ করে বিটিআরসির ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল। সেলটির নিয়মিত নজরদারির অংশ হিসেবে এসব অবৈধ সাইট বন্ধ করা হয়। এছাড়া, আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সার্চ ইঞ্জিন ‘গুগল’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনলাইন জুয়া বা বাজি সংক্রান্ত ১৫০টি গুগল অ্যাপস বন্ধের জন্য রিপোর্ট করা হলে এরইমধ্যে গুগল কর্তৃপক্ষ প্লে স্টোর থেকে ১৪টি অ্যাপস বন্ধ করেছে এবং অবশিষ্ট অ্যাপস বন্ধের জন্য যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। একই সঙ্গে ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে জুয়া খেলার ওয়েবসাইট ও গুগল অ্যাপসের প্রচার এবং অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ায় এ ধরনের ২৭টি ফেসবুক লিংক, ৬৯টি ইউটিউব লিংক বন্ধের জন্য রিপোর্ট করা হয়। এর মধ্যে ১৭টি ফেসবুক লিংক ও ১৭টি ইউটিউব লিংক বন্ধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট লিংক বন্ধের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। কিন্ত এসবেও কোনো কাজ হচ্ছে না। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের ডিসি মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, এই বিষয়গুলো খুব সহজলভ্য হওয়ায় দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খোঁজখবর রাখছে। সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইরের সাইটগুলো সঠিকভাবে জুয়ার পেমেন্ট করে থাকে। বাংলাদেশে কিছু প্রতিষ্ঠিত সাইট আছে তারা কিন্তু জুয়ার পেমেন্টগুলো করে না। লোকাল লোকদের বসিয়ে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করে একটা সুনির্দিষ্ট সময়ের পর তারা প্রাপ্তটা পায় না। অথবা তারা হারিয়ে ফেলে। প্রতিনিয়ত এসবের বিরুদ্ধে কাজ করছেন গোয়েন্দারা। এরপরও ঘটছে জুয়ার বিস্তৃতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ জাতীয় জুয়ার সাইটগুলো নির্ণয় করার জন্য ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স খুব প্রয়োজন। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের ডিসি মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, সবাই মিলে যদি ঠিকভাবে এগুতে পারি এবং কালচারাল ও ঐতিহ্যগত বিষয়গুলো যদি জোরদার করতে পারি তাহলে এই প্রবণতাগুলো কমানো সম্ভব। জানা গেছে, উন্নত দেশেগুলোতে অনলাইন জুয়া বৈধ। বাংলাদেশে যেসব অনলাইন সাইট সেগুলোর প্রায় সব পরিচালিত হয় বিদেশ থেকে। বাংলাদেশে থাকে ছোট বড় এজেন্ট। জুয়ার এসব সাইটের অধিকাংশ পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব সাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশের এজেন্টরা। লেনদেনের সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস -এমএফএস। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়- রাশিয়া থেকে পরিচালিত জুয়ার সাইট বেটউইনার ও ওয়ানএক্সবেট-সহ একাধিক সাইটে বাংলাদেশিদের লেনদেনের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় যুক্ত। এ ছাড়া রয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমেও পেমেন্ট করার সুযোগ। ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করা যায় এসব সাইটে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মোবাইল ব্যাংকিং খাতে দেশে নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ১১ কোটি ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩০। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিকাশ, নগদ, রকেট, এমক্যাশসহ মোট ১৫টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৯ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন করেছে। আর ওই অর্থবছরে জাতীয় বাজেট পেশ করা হয় ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, জাতীয় বাজেটের দেড় গুণের বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। শুধু গত জুনেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এদিকে বিটিআরসি বলছে, মোবাইল অ্যাপ ছাড়াও অপরাধীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ডোমেইনের মাধ্যমে সরাসরি অনলাইন গেম বা জুয়ায় অংশগ্রহণ করে। এজন্য দেশে ও বিদেশে থাকা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলে নিবন্ধন করা হয়। তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য কার্ড বা অন্য কোনো মাধ্যমে জমা দিয়ে জুয়ায় অংশ নিতে হয়। অনলাইন জুয়াড়িরা বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা আদান-প্রদান করে থাকে। বিটিআরসি বলছে, জুয়া বা বাজি বন্ধে তাদের এ ধরনের নজরদারি কার্যক্রম চলবে। জুয়া-সম্পর্কিত সাইটের তথ্য বিটিআরসিকে জানাতে নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে তারা।