নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদের পর খুলতে শুরু করেছে বাজার। ঈদের আগে যেসব জিনিসের দাম বাড়তি ছিল, তার বেশির ভাগের দাম এখনও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। ঈদের পর বেড়েছে সব ধরনের মাছ ও সবজির দাম। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর হাতিরপুল, কারওয়ান বাজার ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা। রুই ৩৫০ টাকা, কাতল ৩২০, শিং ৫৫০, পাবদা ৪৫০, চিংড়ি ৬০০-৮০০, ইলিশ (কেজি) ১৫০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। নিউমার্কেটের মাছ বিক্রেতা বাবলু মিয়া বলেন, ঈদের ছুটি শেষে মাছের মূল আড়ত এখনও পুরোপুরি খোলেনি। আরও দুই একদিন পরে খুললে সেসব আড়তে সারা দেশ থেকে মাছ আসবে। তখন দাম সহনীয় হবে। মুরগির দাম ঈদের সময়ের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা, কক ৩৫০, দেশি মুরগি ৬৪০, লেয়ার ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গরু মাংসের চাহিদা কম থাকলেও দাম কমেনি। ঈদের সময় যে দামে বিক্রি হয়েছে, বৃহস্পতিবারও (১৪ জুলাই) একই দামে গরুর মাংস ৭০০ এবং খাসির মাংস ১০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। ঈদের আগে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। ঈদের সময় শসা ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। টমেটু ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, গাঁজর ১০০ থেকে ১২০০ টাকা প্রতি কেজি। হাতিরপুলের সবজি বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, ছুটির কারণে বাজারে সব রকমের সবজির সরবরাহ কম। চাহিদা বেশির কারণে দামও বেশি। হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব সবজির দামও বেড়েছে। সব সবজিই কেজিতে ১০/২০ টাকা করে বেড়েছে। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, পেঁপে ৩০ টাকা, ঢেড়স ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, লেবু প্রতি ডজন ১০০-২২০ টাকা, কাঁচা কলা ৩০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারে ব্যাংক কর্মকর্তা মতিউর বলেন, শসা ১২০ টাকা, টমেটু ১৩০ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ২০০ টাকা। চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে বাজারে চাহিদা মতো নাজিরশাইল চালের সরবরাহ নেই। যে কারণে এক কেজি নাজির ৭৫ টাকা থেকে এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে ৪৬ টাকার পাইজাম বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বিক্রি হয় কেজি ৫০ টাকা। ৫৪টাকা কেজির আটাশ চালের দাম ৫৮টাকা। মিনিকেট চাল ৬২ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। বেসরকারি চাকরিজীবী মাইদুল বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষদের বাজার করাই কঠিন হয়ে পড়ছে দিন দিন। কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. লোকমান হোসেন বলেন, কয়েকটি কোম্পানির হাতে শুধু চাল নয়, নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তেল, পেঁয়াজ, চিনি, আটা-ময়দার মতো নিত্যপণ্য। এসব কোম্পানি একজোট হয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। আমদানি, উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, মূল্য নির্ধারণ-সবকিছুই এসব কোম্পানিরা বসে নির্ধারণ করে। চাঁপাই হক অটো রাইস মিলের ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর ফসলহানী হচ্ছে। কৃষকদের কাছ থেকে আমরা সরাসরি যে পরিমাণ ধান কিনতে পারছি, তারচেয়ে বেশি ধান ফড়িয়াদের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি কিনে নিচ্ছে। ওদের টাকার তুলনায় আমাদের টাকার পরিমাণ কম বলে ওরা বেশি দামে ধান কিনছে। আবার সেই ধান থেকে চাল করে নিজেদের মতো করে বাজারে সে চাল বিক্রি করছে। চাঁপাইয়ের সাগর অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী সাগর বলেন, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে আমাদের কয়েক শত টন ধান ও চাল ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া চাতালে কাজ করার মতো পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মার্কেটের চাহিদা মতো চাল মিল থেকে সরবরাহ করতে পারছি না আমরা। এ সুযোগে করপোরেট কোম্পানিগুলো ইচ্ছে মতো বাজারে চালের দাম বাড়াচ্ছে। আশুগঞ্জের এম বি রাইস মিলের মালিক মোবারক হোসেন বলেন, বড় বড় করপোরেট কোম্পানিগুলো ধানের একটা বড় অংশ কিনে নিয়ে যায়। ওরা যে টাকায় কিনে নেয়, আমরা সেই টাকায় কিনতে পারি না। তাই পরবর্তী সময়ে তারাই নিজেদের মন মতো দামে বাজারে চাল বিক্রি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা, করপোরেট কোম্পানিদের ধান কেনা বা চাল বাজারজাত করার ব্যাপারে শর্ত মানতে বাধ্য করা, সহজ কিস্তিতে মেশিনারিজ-সার-বীজ এসব সরকারিভাবে সরবরাহ না করতে পারলে চালের দাম সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে বলেও জানালেন মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীরা। এদিকে, বাজারে পেঁয়াজ ৫০ টাকা, প্যাকেট আটা ৯৫, ময়দা ১২৫, ভোজ্যতেল ১ লিটার ১৯৮, ২লিটার ৩৯৪, ৫লিটার ৯৮৫, মসুর ডাল ১৪০, ডিম (ডজন) ১২০, আদা ১২০, রসুন ১৮০, আলু ৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। চিনি (সাদা) ৮৫-৮৭ টাকা, চিনি (লাল) ১০০-১১০, গুড়ো দুধ ৫০০ গ্রাম ৪০০-৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের অজুহাতের সীমা নেই। তারা কারণে-অকারণে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। তাদের এ অসৎ প্রবণতা ঠেকাতে দেশে আইনও আছে। তবে সে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নেই। ফলে দিন দিন ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। এ ব্যাপারে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি