November 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, January 2nd, 2022, 8:56 pm

পঞ্চাশ বছরে বিসিকের ৫৮ শিল্পনগরী, চলতি অর্থবছরেই হচ্ছে আরও ছয়টি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে ৫৮টি শিল্পনগরী গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। বর্তমানে সংস্থাটির ৭৬টি শিল্পনগরী রয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) মধ্যে বাংলাদেশ আরও ছয়টি শিল্পনগরী নির্মাণ প্রকল্প শেষ হচ্ছে। এরইমধ্যে অধিকাংশ শিল্পনগরীর কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশেরও বেশি। কিছু জায়গায় প্লটও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটিতে কর্মসংস্থান হবে প্রায় দুই লাখ মানুষের। বিসিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, সংস্থাটির কর্মকা- শুরু হয়েছিল বস্তুত ঋণদান কার্যক্রমের মাধ্যমে। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝিতে এসে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। যার অংশ হিসেবে তৎকালীন ১৮টি জেলায় প্রতিটিতে একটি করে মোট ১৮টি শিল্পনগরী স্থাপন হয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশে জেলার সংখ্যা বেড়ে ২০টিতে উন্নীত হলে বিসিকের শিল্পনগরীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০টিতে। আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসন করে শিল্পায়নের ধারা অব্যাহত রেখে বর্তমানের বিসিক শিল্পনগরীর সংখ্যা ৭৬টি। বিসিক জানিয়েছে, এ অর্থবছরে সমাপ্ত শিল্পনগরীগুলো হচ্ছে- সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক, রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী-২, ভৈরব বিসিক শিল্পনগরী, নরসিংদী বিসিক শিল্পনগরী, বিসিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী এবং রাউজান বিসিক শিল্পনগরী। বিসিক প্রকল্প শাখা থেকে আরও জানা যায়, বর্তমানে বিসিকের ১৩টি শিল্পনগরী নির্মাণ প্রকল্প চলমান। আগামী অর্থবছরে আরও ১৫টি শিল্পনগরী নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প এলাকার মতো কিছু বিশেষায়িত শিল্পনগরীও রয়েছে। এছাড়া গত অর্থবছরে (২০২০-২১) বিসিক পাঁচটি শিল্পনগরীর কাজ শেষ করেছে। যেগুলো এখন উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো হলো- বরগুনা বিসিক শিল্পনগরী, জামালপুর বিসিক শিল্পনগরী, ঢাকা চামড়া শিল্পনগরী, চুয়াডাঙ্গা বিসিক শিল্পনগরী ও অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) শিল্পপার্ক। আতাউর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, সারাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে আরও ৩০টি শিল্পনগরী গড়ে তুলতে চায় বিসিক। ২০৪১ সালের মধ্যে বিসিকের শিল্পনগরীর সংখ্যা হবে ১০০টি। এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বিসিক। বিসিকের পরিচালক (প্রকল্প) আতাউর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই ছয়টি প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে। চলতি বছরের বাইরে বরিশাল বিসিক শিল্পনগরী প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছু আর্থিক জটিলতা থাকায় সেটা সম্পন্ন হচ্ছে না। বাকিগুলো সময়মতো শিল্প উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। আতাউর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, এসব বড় শিল্পনগরীর বেশিরভাগ ৪শ একর বা তার চেয়ে বড়। প্রতিটিতে প্রায় দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এসব শিল্পনগরীতে গড়ে উঠবে শতাধিক প্রতিষ্ঠান, যা দেশের সার্বিক শিল্পখাতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। এদিকে, বর্তমানে সারাদেশে বিসিকের শিল্পনগরীগুলো অনেক আগে নির্মাণ করা ও আয়তনে বেশ ছোট। নতুনভাবে নির্মিত শিল্পনগরীগুলো ৪শ একর বা তার চেয়ে বড় করে বানানো হয়েছে। এজন্য ৪০ হাজার একর জমি নিচ্ছে বিসিক। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা খরচ করছে সংস্থাটি। দেশে বিক্ষিপ্তভাবে কোনো কারখানা না গড়ে তুলে এসব শিল্পনগরীতে কলকারখানা নিয়ে আসতে চায় বিসিক। অন্যদিকে, এসব শিল্পনগরীতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পাঁচ বছরে পাঁচটি সমমানের কিস্তিতে প্লটের দাম পরিশোধের সুযোগ রেখেছে বিসিক। উদ্যোক্তাদের জমিগুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে ৯৯ বছরের জন্য। এ ছাড়া উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারঘোষিত বাড়তি কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবেন তারা। পাশাপাশি ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে এসব শিল্পনগরীতে গড়ে তোলা কলকারখানা ও এর যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার কাগজপত্র অনুমোদন দেবে সরকারি এই সংস্থাটি। এসব শিল্পনগরীতে মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প ৪০ শতাংশ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৪০ শতাংশ প্লট বরাদ্দ পাবেন। বাকি ২০ শতাংশ প্লট দেওয়া হবে কটেজ, মাইক্রো ও স্মল (সিএমএস) উদ্যোক্তাদের। বিশেষায়িত এসব শিল্পনগরীতে এ খাতের জন্য থাকবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এ ছাড়া স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ডিসির কাছে শিল্পনগরী হস্তান্তরের পরেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্লট বরাদ্দ পাবেন। সূত্র জানায়, এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর কাজ শেষের পথে। ৪শ একরের এই শিল্পনগরী যমুনা সেতু থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং ঢাকা-সিরাজগঞ্জ হাইওয়ে থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এতে শিল্পপ্লট রয়েছে ৪৮৭টি। জানা গেছে, কাজ শেষ হওয়ার আগেই এই শিল্পনগরীতে পাঁচটি বড় প্রতিষ্ঠান কারখানার জন্য প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। এর মধ্যে কাজী ফার্ম ১০ একর, মতিন স্পিনিং মিল ২০ একর ও ওয়ান ফার্মা ১০ একর জায়গার জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছে। এ ছাড়া সেখানে কারখানা করতে চায় মন্ডল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এবং এফএম প্ল্যাস্টিকস। সিরাজগঞ্জে বিসিকের প্রকল্প পরিচালক আবদুল খালেক বলেন, ২০ শতক থেকে শুরু করে ২০ একর পর্যন্ত শিল্পপ্লট রয়েছে এ শিল্পনগরীতে। এরইমধ্যে পাঁচটি প্রস্তাবনা জমা পড়েছে, আরও অনেক কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করছে। আমরা চাই, বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখানে তাদের কারখানা গড়ে তুলুক। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বারে এ শিল্পনগরীর সবটুকু জায়গা ব্যবহার হোক সেটা বিসিক চায়। এখানে সড়ক, রেল ও নৌÑতিন পথেই যোগাযোগ রয়েছে। এই শিল্পনগরীতে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, রাস্তা ও ড্রেনেজের ব্যবস্থাও অনেক উন্নত। এ ছাড়া প্রচুর গ্রিন স্পেস, ডাম্পিং ইয়ার্ড ও ডিপ টিউবওয়েলের আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে প্রাকৃতিকভাবে একটি ২০ একরের লেকও রয়েছে। শিল্পনগরীতে জমির দামের বিষয়ে তিনি বলেন, তিন থেকে সাড়ে তিন লাখের মধ্যে প্রতি শতক জমি পাবেন শিল্পোদ্যোক্তারা। প্রকল্প চূড়ান্ত হলে দাম সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে। বিসিক বলছে, বস্তুত দেশে শিল্পের ভিত তৈরি হয় বিসিক শিল্পনগরীর মাধ্যমে। দেশে অনুকরণযোগ্য শিল্পোদ্যোক্তাদের কারখানা, নিট/তৈরি পোশাক শিল্প, হালকা ও মাঝারি প্রকৌশল, রাজশাহী সিল্ক, জুতাসহ বেশকিছু শিল্পের ভিত বিসিকের হাতেই তৈরি। জানা গেছে, শিল্পনগরীর পাশাপাশি বর্তমানে বিসিকের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি শিল্প সহায়ক কেন্দ্র, চারটি আঞ্চলিক কার্যালয়, একটি লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়, একটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (স্কিটি), ১৫টি দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র, একটি নকশা কেন্দ্র এবং ছয়টি মৌচাষ প্রশিক্ষণ ও বিভাজন কেন্দ্র রয়েছে।