May 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, February 18th, 2024, 8:33 pm

পাকিস্তানে ভোট কারচুপি স্বীকার করে কমিশনারের পদত্যাগ

অনলাইন ডেস্ক :

পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে ভোট কারচুপিতে জড়িত থাকার কথা জানিয়ে শনিবার পদত্যাগ করেছেন দেশটির রাওয়ালপিন্ডি বিভাগের কমিশনার লিয়াকত আলী চাতা। তবে তাঁর এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে ভোট কারচুপির প্রতিবাদে গত শনিবার ইসলামাবাদ, লাহোর, করাচিসহ বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। এ সময় দলটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। গত শনিবার রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে রাওয়ালপিন্ডির বিভাগীয় কমিশনার লিয়াকত আলী চাতা নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

লিয়াকত বলেন, শহরের নাগরিকদের প্রতি তিনি অবিচার করেছেন। পাকিস্তানে নির্বাচনের দিন মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলাফল ঘোষণায় ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। অনেক জনপ্রিয় নেতা জয়ী হননি। এসব কারণে পিটিআইসহ অনেকে ভোট কারচুপির অভিযোগ করে আসছিল। এর মধ্যে কমিশনার লিয়াকতের এমন বিস্ফোরক বক্তব্য সামনে এলো। উল্লেখ্য, পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি বিভাগে জাতীয় পরিষদের ১৩টি আসন রয়েছে। এবারের নির্বাচনে এর মধ্যে ১১টিতেই জয় পেয়েছে রাজনীতির মাঠে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। বাকি দুটির একটি করে জিতেছে ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। এ ছাড়া বিভাগের ২৭টি প্রাদেশিক আসনের মধ্যে ১৫টিতে জয় পেয়েছে পিএমএল-এন, বাকিগুলোতে স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে রাওয়ালপিন্ডিতে ভোট কারচুপির দায় স্বীকার করেন লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, ‘আমরা পরাজিত প্রার্থীদের ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী বানিয়েছি। এ জন্য নিজেকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করছি।…আমরা দেশের সঙ্গে অন্যায় করেছি। রাওয়ালপিন্ডির কাচেরি চকে আমাকে ফাঁসি দেওয়া উচিত।’ লিয়াকত বলেন, ‘কে এই অন্যায় (ভোট কারচুপি) করছে এবং এর পেছনে কারা, তা কারো অজানা নয়। হারতে বসা জাতীয় পরিষদের ১৩ প্রার্থীকে ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী বানানো হয়েছে।’

পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

কারচুপিতে নিজের জড়িত থাকার বক্তব্য দেওয়ার পর কমিশনার লিয়াকতকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় পুলিশ। পরে অবশ্য এই দাবি থেকে সরে আসে তারা। এরইমধ্যে কমিশনার লিয়াকত ও রিটার্নিং অফিসারদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। তবে রাওয়ালপিন্ডির বিভাগীয় কমিশনারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন কমিশন বলেছে-কমিশনের কোনো কর্মকর্তা তাঁকে ফলাফল পাল্টে দেওয়ার নির্দেশনা দেননি। কোনো বিভাগের কমিশনার রিটার্নিং অফিসার বা প্রিজাইডিং অফিসার নন, নির্বাচন পরিচালনায় তাঁদের সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। এ বিষয়ে শিগগির তদন্ত শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নাকভি এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

লিয়াকতের দাবি প্রত্যাখ্যান করে পাঞ্জাব তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথ্যমন্ত্রী আমির মির বলেন, ‘এটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করার একটি চেষ্টা। লিয়াকত মানসিক বিকারগ্রস্ত। আগামী ১৩ মার্চ তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা। এর কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি রাজনৈতিক স্টান্ট করছেন।’ কথিত কারচুপির পরও সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া পিটিআই দলের নেতা আলী মুহাম্মদ খান বলেছেন, ‘রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার এদিন বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁর দাবির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে-জনগণের রায় চুরি করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিন, নির্বাচন কমিশন তার ভুল সংশোধন করুক এবং জনগণের রায় আমাদের ফিরিয়ে দিক।’

এ বিষয়ে তদন্তের দাবি করে পিপিপি নেতা শেরি রেহমান বলেন, ‘তদন্ত হওয়া উচিত। তবে প্রশ্ন হচ্ছে-নির্বাচনের ১০ দিন পর কেন রাওয়ালপিন্ডি কমিশনারের বিবেক জেগে উঠল।’ লিয়াকতের কাছে অবশ্য কারচুপির প্রমাণ চেয়েছেন প্রধান বিচারপতিসহ অনেকে। এদিকে পিএমএল-এন নেতা রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, লিয়াকত তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সম্প্রতি মানসিক সমস্যার জন্য তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। পিএমএল-এনের মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেবও কমিশনারের দাবিকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়েছেন।

দেশজুড়ে পিটিআইয়ের বিক্ষোভ

নির্বাচনের কারচুপির অভিযোগ তুলে ইসলামাবাদ, করাচি, হায়দ্রাবাদ, গুজরানওয়ালা, ফয়সালাবাদসহ দেশের বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ করেছে পিটিআই। লাহোর শহরে বিক্ষোভের সময় দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা সালমান আকরাম রাজাসহ বেশ কয়েকজন সমর্থককে আটক করে পুলিশ। সবচেয়ে বড় জমায়েত হয় পিটিআইয়ের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত খাইবারপাখতুনখোয়া প্রদেশে। এর রাজধানী পেশোয়ারে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ইসলামাবাদ প্রেস ক্লাবের বাইরে বিক্ষোভ করে পিটিআই সমর্থকরা। এদিকে নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে বেলুচিস্তানের চামান জেলায় বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি (এএনপি) ও জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজলের (জেইউআই-এফ) নেতাকর্মীরা। সূত্র : জিও নিউজ, দ্য ডন, এএফপি