November 23, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, September 9th, 2023, 7:14 pm

পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই মানুষ ও পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকে থাকতে পারে: জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনা

ইউএনবি, নয়াদিল্লি :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, পারস্পরিক সহযোগিতা মানবজাতি ও পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একমাত্র মাধ্যম।

তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো মানুষ ও আমাদের মাতৃভূমি কেবল পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমেই টিকে থাকতে পারে।’

ভারতের প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপম কনভেনশন সেন্টারে (ইসিসি) অনুষ্ঠিত জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন ২০২৩-এ ‘ওয়ান আর্থ’ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের থিম হলো- ‘ওয়ান আর্থ, ওয়ান ফ্যামিলি, ওয়ান ফিউচার’ (এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ)।

মানুষ ও পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য শেখ হাসিনা এমন একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থার আহ্বান জানিয়েছেন, যা দারিদ্র্য বিমোচনের সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্য প্রযুক্তিগত স্থানান্তরের জন্য অর্থায়ন করবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা চাই যা দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজের জন্য প্রযুক্তিগত স্থানান্তরের অর্থায়নের জন্য সমাধানের পথ প্রশস্ত করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শীর্ষ সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তনের একাধিক সংকট, কোভিড-১৯ মহামারি এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জে জর্জরিত।

তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জগুলো সমস্ত মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়নের জন্য এক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সম্প্রদায়ের গ্রহণ করা অপরিহার্য করে তুলেছে।’

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ খুব নগণ্য ভূমিকা রাখলেও এর পরিণতির শিকার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশেটি।

তিনি বলেন, ‘অতএব সবুজ ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাদের সব উন্নয়ন প্রচেষ্টা। এখন, আমরা সার্কুলার ইকোনমি’র (উপকরণ বা পণ্যের পুনঃব্যবহার ও পুনঃউৎপাদনের উপর ভিত্তি করে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে) পথও বেছে নিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সচেতন অনুশীলন প্রচারের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির চালু করা জীবনযাত্রার প্রচারকে সমর্থন করে।

বিশ্বব্যাংকের গ্রাউন্ডসওয়েল রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যূত হতে পারে।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশে প্রশমনের সুযোগ খুব কম, তবুও আমরা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং এসডিজি অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব মোকাবিলায় অনেক রূপান্তরমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৭ সালে তিনি আশ্রয়ণ বা গৃহহীনদের জন্য আশ্রয় নামে একটি প্রকল্প শুরু করেছিলেন।

এই উদ্যোগের আওতায় চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সরকার প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে বাড়ি ও জমি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে।

তিনি বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত করা।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি ও জলবায়ু অভিযোজনে শক্তিশালী অর্জন করেছে। ‘দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য আমরা ৪ হাজার ৫৩০টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করেছি। আমরা এখন বহুবিধ ব্যবহারের জন্য ‘মুজিব কিল্লা’ নামে আরও ৫৫০টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করছি।’

তিনি কনফারেন্স অন ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিডিআরআই)-এর জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্যোগের প্রশংসা করেন। ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ এই প্ল্যাটফর্মে যোগ দেয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ‘জলবায়ু সমৃদ্ধির ঝুঁকি থেকে স্থিতিস্থাপকতার দিকে নিয়ে যেতে আমরা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ চালু করেছি।

তিনি আরও বলেন, তার সরকার আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিস্থাপক ও সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘২০২২ সালে আমার সরকার জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা চালু করেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। আমরা এই বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সক্রিয় সমর্থনের আহ্বান জানাই।’

২০২২ সালে গঠিত জাতিসংঘ মহাসচিবের গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেখ হাসিনা মানবজাতি ও পৃথিবীর অস্তিত্বের স্বার্থে তার চারটি প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

এগুলো হলো:

প্রথম – বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করুন এবং বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করুন। এখানে জি-২০ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সংকট মোকাবিলায় কার্যকরী সুপারিশগুলো তৈরি করার জন্য তাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে প্রস্তুত’।

দ্বিতীয়- মানবতার বৃহত্তর সুবিধার জন্য বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে সাহসী, দৃঢ় ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

‘বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য সমস্ত প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর যথাযথ দায়িত্ব পালন করা উচিত।’

তৃতীয় – জলবায়ুজনিত অভিবাসন মোকাবিলায় অতিরিক্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষয়ক্ষতির তহবিলকে কার্যকর করা।

‘আসন্ন কপ২৮-এ আমি সবাইকে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির জন্য তহবিল বাস্তবায়নের উপর জোর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করব।’

পরিশেষে- সব মানুষেরই সুস্থ জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত। বিশ্ব সম্প্রদায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে ভুলবেন না এবং তাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের পৃথিবীকে শক্তিশালী ও বাঁচাতে জি-২০ অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ। আমাদের একে অপরের এবং আমাদের মা পৃথিবীর যত্ন নেওয়ার জন্য নিজেদের পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করতে হবে।’

এর আগে, ভারত মণ্ডপম কনভেনশন সেন্টারে জি-২০ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান জি-২০ চেয়ারম্যান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।