April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, April 11th, 2022, 8:30 pm

বাঁশের শো-পিস দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে চান কুমিল্লার শাহ্ জামাল

বাঁশের তৈরি নান্দনিক জিনিসপত্রের জন্য খ্যাতি ছিল কুমিল্লার বুড়িচংয়ের ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম আনন্দপুরে। আর এই কারণে প্রায় দশ বছর আগে এই গ্রামে বিদেশিদের আনাগোনা ছিল। শুধু বিদেশি পর্যটক নয়, বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে আনন্দপুরের যোগাযোগ ছিল।

জানা গেছে, বাঁশের জিনিসপত্র তৈরি শিল্পের সঙ্গে আনন্দপুর ও আশেপাশের গ্রামের প্রায় তিনশতাধিক পরিবার যুক্ত ছিল। বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রির ধুম পড়ে যেতো। এসব গ্রামে দূর-দূরান্তের মানুষ ভিড় করতেন। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ছিলও বেশ। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আনন্দপুরের সেই আনন্দঘন আবহ ম্লান হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত চাহিদা থাকলেও দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তির অভাবে এ শিল্পের উৎপাদন কমে গেছে। বর্তমানে মাত্র ১১টি পরিবার এই শিল্পের সাথে যুক্ত আছে।

তাদের মধ্যে একজন শাহ্ জামাল। তিনি কুমিল্লা আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটসের স্বত্বাধিকারী। তার প্রয়াত বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেমের হাত ধরেই বুড়িচংয়ে এ শিল্প বিস্তার লাভ করে। এই শিল্পকে বাঁচাতে শাহ্ জামাল এখনও সংগ্রাম করছেন। তিনি আবারও আনন্দপুরের বাঁশের শো-পিস ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে দিতে চান।

শাহ্ জামালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রঙ তুলি দিয়ে ওয়াল মেটে আল্পনা আঁকছেন তিনি। পাশে কাজ করছেন তার ভাই আবুল কালাম ও সাইফুল ইসলাম, প্রতিবেশী ডালিয়া এবং আরও একজন। কলমদানি আর ফুলদানি তৈরি করতে বাঁশ ছোট টুকরো করে কাটা হয়েছে। কেউ কেউ আবার আগুন দিয়ে বাঁশে সেঁক দিচ্ছেন। সেই বাঁশ ঘষে পরিষ্কার করা হয়। তার ওপরে নানা রঙের ডিজাইনসহ হাত দিয়ে সব যত্ন সহকারে প্রতিটি শো-পিস তৈরি করা হয়। মাটির ঘরে বেতবোনার মেশিন। পাশে তৈরিকৃত টেবিল ল্যাম্প, ফুলদানি, কলমদানি, ওয়ালমেট, ক্যালেন্ডার, দরজা-জানালার পর্দার সারি সারি করে রাখা।

শাহ্ জামাল ইউএনবিকে জানান, এমন ৫২টি পণ্য উৎপাদন পণ্যের মধ্যে তিনি আলপনা করেন। মাসে তার ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার-২০২০ পান তিনি।

তবে দুঃখের অন্ত নেই বলে জানান শাহ্ জামাল।

তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল এ শিল্পে বড় অবদান রাখা ও নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার। কুমিল্লায় প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাব নেই। কিন্তু দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। সময়ের দাবিতে প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। পুঁজি ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে প্রযুক্তি থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছি। যার কারণে উৎপাদনও বেশ কমে গেছে।

শাহ্ জামান বলেন, বাজারে বাঁশের তৈরি শো-পিসের ব্যাপক চাহিদা। ওই হারে উৎপাদন করার মতো প্রযুক্তি, দক্ষ জনশক্তি ও উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করার জন্য জায়গার সঙ্কট আছে। যার কারণে লাভের ভাগীদার হয়ে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।

জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে এসএসসি শেষে আবুল হাসেমের ছেলে শাহ্ জামাল কুমিল্লা বিসিক থেকে কমার্শিয়াল আর্টের ওপর তিন বছরের কোর্স শেষ করে বাবার পেশায় পা বাড়ান। আত্মকর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতায় তিনি আনন্দপুর হাজিবাড়ির পৈতৃক ভিটায় গড়ে তোলেন কুমিল্লা আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস্ নামক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্দেশ ছিল কুটির শিল্পজাত দ্রব্যাদি তৈরি, প্রশিক্ষণ ও বিক্রয়। প্রথম দিকে বেশ সফল ছিলেন তিনি। ব্র্যাক ও বিসিকের সহায়তায় তিনশ নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেন। বিদেশি পর্যটক ও সংস্থাগুলোর আসা-যাওয়া চলছিল নিয়মিত। চীন, জাপান, কলম্বিয়া, থাইল্যান্ড, আমেরিকা ও ফ্রান্সের প্রতিনিধি দল সফর করেন শাহ্ জামালের প্রতিষ্ঠানে। ব্যবসা ভালোই চলছিল। কাঁচামালের সঙ্কট নেই, থেমে নেই উৎপাদনও। বিক্রিতেও কখনো ভাটা পড়েনি। কিন্তু বাদ সাধে প্রযুক্তি।

মেশিনারি ও প্লাস্টিকের পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে পিছিয়ে পড়ে যান তিনি ও তার সহকর্মীরা। এদিকে তারা নিজেরাও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার মতো আর্থিক সঙ্গতি অর্জন করতে পারেননি। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ পেশা ছাড়তে শুরু করেন অনেকেই।

এ বিষয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.শাহাদাত হোসেন বলেন, কুটির শিল্পী মো. শাহ জামালকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি পরিশ্রমী উদ্যোক্তা। তার কাজকে এগিয়ে নিতে আমরা সহযোগিতা করবো।

কুমিল্লা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপ-মহাব্যবস্থাপক মুনতাসীর মামুন জানান, রাঙামাটিতে বাঁশ-বেত নিয়ে কাজ করা কুটির শিল্পীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া সরকারও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করছে। শাহ্ জামালরা নিজেদের এগিয়ে নিতে বিসিক থেকে যে যে সুবিধা পেতে চায়, তার ব্যবস্থা করতে কাজ করবো।

—ইউএনবি