April 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, March 25th, 2024, 6:56 pm

বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে তিনটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই

ছবি: পি আই ডি

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সোমবার তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।

এগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, থিম্পুতে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন এবং ভোক্তা অধিকার বিষয়ে কারিগরি সহযোগিতা।

এ ছাড়া সাংস্কৃতিক বিনিময়সংক্রান্ত আরেকটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদ বাংলাদেশের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তানদিন ওয়াংচুক, ভুটানের বাণিজ্যমন্ত্রী তাশি ওয়াংম্যাক এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেমা চোডেন নিজ নিজ পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমঝোতা স্মারক সইয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া বছরে ভুটানের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩০টি করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভুটানের ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তাদের জন্য প্রতি বছর দুটি আসনও প্রস্তাব করেছে। ভুটানে একটি কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনেও বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে (বিএআরসি) প্রতি বছর ভুটানের কর্মকর্তাদের তিন বছরের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

শুভেচ্ছা ও বন্ধুত্বের বিশেষ নিদর্শন হিসেবে ভুটানের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কম্পিউটার ও ল্যাপটপ হস্তান্তর করে বাংলাদেশ।

এর আগে ভুটানের রাজা বঙ্গভবনে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে ভুটানের রাজা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক করেন।

এ ছাড়াও তাদের দুজনের মধ্যে একটি বৈঠক হবে।

এর আগে ৪ দিনের সফরে সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে ঢাকায় আসেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় রাজার এই সফর।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও ফার্স্ট লেডি গান স্যালুট ও গার্ড অব অনার দিয়ে রাজাকে অভ্যর্থনা জানান।

বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান রাজা ওয়াংচুক।

একই দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ রাজার সঙ্গে তার অবস্থানকালীন আবাসস্থলে সাক্ষাৎ করেন।

আগামীকাল মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাজা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করবেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। সেখানে একটি বৃক্ষ রোপণ করবেন ভুটানের রাজা।

পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন ভুটানের রাজা।

তিনি বঙ্গভবন পরিদর্শন করবেন, সেখানে রাষ্ট্রপতি ও ফার্স্ট লেডি তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন রাজা।

রাষ্ট্রপতি সফররত রাজপরিবারের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করবেন।

বুধবার (২৭ মার্চ) সকালে ভুটানের রানী জেটসুন পেমা ওয়াংচুক ও ভুটানের নির্বাচিত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা একটি বিশেষ ফ্লাইটে ভুটানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বিমানবন্দরে তাদের বিদায় জানাবেন।

ভুটানের রাজা পদ্মা সেতু ও বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ পরিদর্শন করবেন।

বৃহস্পতিবার রাজা কুড়িগ্রামের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন।

বৃহস্পতিবার বিকালে সোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে আসামের গোলকগঞ্জের উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন ভুটানের রাজা।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তাকে বিদায় জানাবেন।

ভুটানের চতুর্থ রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুক সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে এক চিঠিতে বলেন, তার গতিশীল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

তিনি ভুটানকে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটানের তৃতীয় রাজা টেলিফোনের মাধ্যমে স্বীকৃতির বার্তা পাঠানোর মধ্য দিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ ভুটান।

সেই তখন থেকে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে একটি বিশেষ বহুমাত্রিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই ভুটান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ফলস্বরূপ, ১৯৭৩ সালের ১২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

—-ইউএনবি