সারাদেশে গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না করতে হয় সে জন্য সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এছাড়া টিকা না নেয়া শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে পারবে না বলেও জানানো হয়েছে। সরকারি এ ঘোষণা অনুযায়ী বাগেরহাট জেলার শিক্ষার্থীরা আগ্রহ চিত্তে করোনার টিকা নিয়েছেন। জেলার ৯টি উপজেলার ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সের শতভাগ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে করোনার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন।
বাগেরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী মোট এক লাখ ৩৬ হাজার ৬৫১ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার টার্গেট নেয়া হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত ওই বয়সের এক লাখ ৪১ হাজার ৩০৮ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। এর ফলে ১০৩ শতাংশ শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত চার হাজার ৬৫৭ জন ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী।
জেলার ১৪টি টিকাদান কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে টিকা নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৬৬৯ জন শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ বকসী জানান, ৫ ডিসেম্বর থেকে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া শুরু হয়। টিকাদান কর্মসূচির জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। এখন দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, আমরা ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় এনেছি। এখন জানুয়ারি মাসের মধ্যে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনতে প্রচেষ্টা চলছে।
বাগেরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, জেলার ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, জেলায় ১৮ বছরের ওপরে ৩৩ হাজার ১১২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৯ হাজার ৫৩১ জন প্রথম ডোজ পেয়েছেন। বাকি তিন হাজার ৫৩১ জন অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন।
জেলা প্রশাসন সব শিক্ষার্থীকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসায় অভিভাবক ও শিক্ষক সকলেই খুশি। টিকার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে নেয়া পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেন তারা।
জেলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন পাল জানান, তার বিদ্যালয়ের এক হাজার ৩৩০ জন শিক্ষার্থীর সবাই প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে।
মঙ্গলবার বাগেরহাট সদর হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রের সামনে দেখা যায়, লম্বা সারিতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা করোনার টিকার- ফাইজার- দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
অপ্রিতা মহন্ত নামে জেলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী জানায়,নিবন্ধন করে মোবাইল ফোনে ক্ষুদেবার্তা (এসএমএস) পাওয়ার পর ৮ জানুয়ারি সে সদর হাসপাতাল কেন্দ্রে গিয়ে করোনার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে। এখন সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় ডোজের জন্য সে অপেক্ষা করছে এবং ক্ষুদেবার্তা পেলেই দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়ার কথা জানায় এই স্কুলছাত্রী।
শেখ আসাদুজ্জামান নামে এক অভিভাবক জানান, তার ছেলে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ছেলে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে। বাবা হিসেবে তিনি সচেতন হওয়ায় ছেলেকে সময় মতো টিকা দিতে উৎসাহিত করেছেন। ছেলের দ্বিতীয় ডোজ টিকার জন্য মঙ্গলবার সদর হাসপতাল কেন্দ্রে এসেছেন তিনি।
অনিতা বিশ্বাস, কোহিনুর বেগম, সুলতানা খাতুন, দেবাশীষ পাল, মোহন আলীসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, ১০ থেকে ১২ দিন আগে তাদের ছেলে-মেয়েরা প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে। তারা নিয়মিত স্কুল-কলেজেও যাচ্ছে।
করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে অভিভাকদের মধ্যেও হতাশা কাজ করে। সরকারি নির্দেশনা মেনে তাদের ছেলে-মেয়েদের টিকা দেয়া হয়েছে। এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় চালু থাকলে ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে-এমটাই প্রত্যাশা তাদের।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, বাগেরহাটে মোট জনসংখ্যা ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৭ জন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষ করোনার টিকা দেয়া হবে। সেই হিসাবে এ জেলায় ১২ লাখ ২১ হাজার ১০৫ জনকে করোনার টিকা দেয়া হবে।
এখন পর্যন্ত মোট ১০ লাখ সাত হাজার সাত জনকে করোনার প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে ছয় লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৫ জনকে। শতকরা হিসাবে জেলার মোট জনসংখ্যার ৫৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং টার্গেট জনসংখ্যার ৮২ দশমিক ৪৭ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ পেয়েছেন। এছাড়া জেলার মোট জনসংখ্যার ৩৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং টার্গেট জনসংখ্যার ৫৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি