অনলাইন ডেস্ক :
এক সপ্তাহের ব্যবধানে যেন ভিন্ন দুই বার্সেলোনার দেখা মিলল। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেওয়া দলটি এবার পুরোটা সময় নিজেদের খুঁজে ফিরল। ম্যাচ জুড়ে প্রবল চাপ ধরে রেখে দুই দফায় এগিয়ে গেল আথলেতিক বিলবাও। আর দুই মুহূর্তের চমকে সমতা টানল শাভি এরনান্দেসের দল। তবে অতিরিক্ত সময়ে আর পেরে ওঠেনি তারা। ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে সেরা দল হিসেবেই কোপা দেল রের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছে বিলবাও। সান মামেসে বৃহস্পতিবার রাতে এক লেগের শেষ ষোলোয় ৩-২ গোলে জিতেছে স্বাগতিকরা। ইনাকি মুনিয়াইনের নৈপুণ্যে বিলবাও এগিয়ে যাওয়ার পর দারুণ গোলে সমতা টানেন ফেররান তরেস। ইনিগো মার্তিনেসের সৌভাগ্যসূচক গোলে বিলবাও আবার এগিয়ে যাওয়ার পর যোগ করা সময়ের শেষ দিকে আবার সমতা টানেন পেদ্রি। পরে অতিরিক্ত সময়ে নিজের দ্বিতীয় গোলে জয় নিশ্চিত করেন মুনিয়াইন। পুরো ম্যাচে বল দখলে বার্সেলোনা এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। গোলের উদ্দেশ্যে বিলবাও মোট ১৯টি শট নেয়, যার সাতটি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে প্রতিযোগিতাটির রেকর্ড ৩১ বারের চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনার সাত শটের কেবল তিনটি লক্ষ্যে। ম্যাচ শুরু হতেই এগিয়ে যায় এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩টি শিরোপা জেতা বিলবাও। সতীর্থের ডান দিকে বাড়ানো থ্রু বল গতিতে জর্দি আলবাকে পেছনে ফেলে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে বাঁ দিকে পাস দেন নিকো উইলিয়ামস। প্রস্তুত ছিলেন মুনিয়াইন। বল ধরে ঠা-া মাথায় উঁচু কোনাকুনি শটে দূরের পোস্টে ঠিকানা খুঁজে নেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। ব্যবধানটা অবশ্য বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি তারা। ২০তম মিনিটে দারুণ গোলে সমতা টানেন তরেস। সের্হিও বুসকেতসের পাস ডি-বক্সে বাঁ দিকে পেয়ে একজনকে কাটিয়ে জোরাল উঁচু শটে বল জালে পাঠান তরুণ স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি গোলরক্ষক। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ম্যানচেস্টার সিটি থেকে কাম্প নউয়ে আসা তরেসের বার্সেলোনার জার্সিতে এটা প্রথম গোল। প্রথমার্ধে সফরকারীদের ওই একটি শটই লক্ষ্যে ছিল। এই সময়ে টানা আক্রমণে বিলবাও মোট ১০টি শট নেয়, যার তিনটি লক্ষ্যে। এই অর্ধের শেষ দুই মিনিটে পরপর তিনটি কর্নার আদায় করে নেয় তারা। কোনোমতে সমতায় থেকে বিরতিতে যায় বার্সেলোনা। ৮৪তম মিনিটে প্রতিপক্ষের দুর্ভাগ্যে বেঁচে যায় বার্সেলোনা। ডান দিকে অনেক দূর থেকে ইনাকি উইলিয়ামসের শট গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে ক্রসবারে লাগে। তবে পরের মিনিটেই প্রত্যাশিত গোল পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। বাঁ দিক থেকে সতীর্থের নেওয়া ফ্রি কিকে দূরের পোস্টে হেড করেন আলেক্স। বল গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনের গায়ে লেগে চলে আসে অন্য পোস্টের কাছে। জেরার্দ পিকের চ্যালেঞ্জে শট নিতে পারেননি ইনিগো মার্তিনেস। তবে বল তার পায়ে লেগে গোললাইন পেরিয়ে যায়। ম্যাচের ঘড়িতে তখন চার মিনিট যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিট শেষ। জয়ের প্রহর গুনছে বিলবাও। ঠিক সেই সময় পেদ্রির চমৎকার গোলে উল্লাসে ভাসে বার্সেলোনা। ডি-বক্সের মধ্যে ডান দিক থেকে অসাধারণ ওভারহেড কিকে পেনাল্টি স্পটের কাছে বল বাড়ান দানি আলভেস। আর প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়ের বাধার মুখে দুর্দান্ত এক শটে লক্ষ্যভেদ করেন পেদ্রি। ঝাঁপিয়ে বলে হাত লাগালেও রুখতে পারেননি গোলরক্ষক। নির্ধারিত সময়ে বার্সেলোনার মাত্র দুটি শটই লক্ষ্যে ছিল এবং দুটিতেই গোল! অতিরিক্ত সময়ের লড়াইও চলতে থাকে একইভাবে। আক্রমণ করতে থাকে বিলবাও আর তা ঠেকাতে ব্যস্ত বার্সেলোনা। অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ভাগের যোগ করা সময়ে মুনিয়াইনের সফল স্পট কিকে আবারও এগিয়ে যায় বিলবাও। এবার আর ব্যবধান ঘোচাতে দেয়নি তারা। ডি-বক্সে নিকো উইলিয়ামসের শটে বল আলবার হাতে লাগলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টিটির বাঁশি বাজান রেফারি। শেষ দিকে কিছুটা মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা যায় বার্সেলোনাকে। তবে উল্লেখযোগ্য আর কিছুই করতে পারেনি মৌসুমের শুরু থেকে ধুঁকতে থাকা দলটি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচ জয়শূন্য রইল কাম্প নউয়ের দলটি। লা লিগায় গ্রানাদার বিপক্ষে ড্র করার পর গত সপ্তাহে স্প্যানিশ সুপার কাপের সেমি-ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে তারা হেরে যায় ৩-২ গোলে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে আগেই বিদায় নিয়ে ইউরোপা লিগে নেমে গেছে বার্সেলোনা। এবার ছিটকে গেল স্প্যানিশ কাপ নামে পরিচিত স্পেনের দ্বিতীয় সেরা এই টুর্নামেন্ট থেকেও। লা লিগাতেও তাদের অবস্থান নাজুক; আছে ষষ্ঠ স্থানে। শীর্ষস্থানের চেয়ে ১৭ পয়েন্টে পিছিয়ে। একটা শিরোপা নিয়ে মৌসুম শেষ করতে হলে খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে হবে শাভির দলকে।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা