নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম না বাড়ালে সরকারের ওপর ভর্তুকির চাপ আরো বাড়বে। ওসব পণ্যের মূল্য সমন্বয় করা না হলে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাবদ প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। যা আগামী অর্থবছরের জিডিপির ১ দশমিক ৯০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যা জিডিপির ১ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে ওসব খাতে অতিরিক্ত ভর্তুকির প্রয়োজন ২৭ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশ্ববাজারে সারের মূল্য ২৩৪ শতাংশ বেড়েছে। টিএসপি সারের দাম বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। আর এলএনজি গ্যাসের মূল্য বেড়েছে প্রতি এমএমবিটিইউতে ১৫ মার্কিন ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ওসব পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে তা আগের মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে। সরকার মূল্য সমন্বয় না করে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারে ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছরে ওসব খাতে বড় অঙ্কের ভর্তুকি গুনতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব-হয় মূল্য সমন্বয় করতে হবে, না হলে ভর্তুকি আরো বাড়াতে হবে। এর আগে নতুন বছরের শুরুতে অর্থ বিভাগ গ্যাস ও বিদ্যুৎ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূল্য বাড়ানোর পদক্ষেপ না নিয়ে ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই কারণে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দের চেয়ে আরো প্রায় ১২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে সারের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশি দামে আমদানি করে সার ভর্তুকি মূল্যে কৃষকের হাতে তা তুলে দেয়া হচ্ছে। সরকার এই মহূর্তে কৃষকের সারের মূল্য বাড়ানোর পথে হাঁটতে চাচ্ছে না। ফলে অর্থ মন্ত্রণালয় ধরেই নিয়েছে ওই খাতে ভর্তুকি বাড়ানো হবে। বিশ্ববাজারে এলএনজি গ্যাসের মূল্যও বেড়েছে। যেখানে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য ৫ মার্কিন ডলারের শতাংশের নিচে ছিল। তা এখন ২০ মার্কিন ডলারে উঠেছে। ওই কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এমন অবস্থায় আগামী (২০২২-২৩) অর্থবছরে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করতে হবে। আর তা না হলে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন হবে। এখনই বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বেড়েছে। যে কারণে সংশোধিত বাজেটে ওই খাতে ভর্তুকি ৯ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করা না হলে এলএনজির আমদানির মূল্য পরিশোধ এবং প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ভর্তুকি পরিশোধ করতে আগামী অর্থবছরে ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। আর সারের মূল্য সমন্বয় করা না হলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনা বাবদ প্রয়োজন হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে সংশোধিত বাজেটে সারের ভর্তুকি ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মোট ভর্তুকির অঙ্ক বাড়ানো হয়েছে। সেখানে এলএনজি খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ গেছে। অর্থবছরের শুরুতে ওই খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে বেড়ে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া করোনার কারণে গরিব মানুষকে কম মূল্যে চাল দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে স্বল্পমূল্যে বিতরণ কর্মসূচির আওতায় ৩২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন চাল দেয়া হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাবে ওই কর্মসূচির ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী তিন মাসে বাকি ২৫ শতাংশ বিতরণ করা হবে। আর ওই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে ভতুকি দেয়া হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। তবে আগামী অর্থবছরের জন্য ওই খাতে আরো ৭৪৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ভর্তুকির প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানো যাবে না। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিতেও ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে। আর ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে যে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে সেজন্য রাজস্ব আহরণ আরো বাড়াতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানির সব খাতে প্রণোদনার প্রয়োজন আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
অন্যদিকে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের মতে, কৃষককে ভর্তুকি মূল্যে সার দেয়া হচ্ছে। আবাসিকসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে গ্যাস যাচ্ছে। ওসব পণ্যের মূল্য সমন্বয় করতে হলে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। সেজন্যই অর্থ বিভাগ প্রস্তাব করেছে ‘হয় মূল্য সমন্বয় করতে হবে, না হলে ভর্তুকি আরো বাড়াতে হবে’।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ