নিজস্ব প্রতিবেদক:
সারা বিশ্বে হালাল পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হলেও সম্ভাবনাময় ওই বাণিজ্য খাতে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ার পরও হালাল বাণিজ্যে সামগ্রিক স্কোরে শীর্ষ ১৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই। শুধু হালাল ফ্যাশনে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৭ম স্থানে থাকলেও হালাল খাদ্য, ইসলামিক ফাইন্যান্স, হালাল ট্যুরিজম, হালাল ফার্মা ও কসমেটিকসে শীর্ষ দশে বাংলাদেশের অবস্থান নেই। করোনা মহামারীতে বিশ্ব বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও হালাল পণ্যের বাণিজ্যে ৩ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি ছিল। মুসলিম দেশগুলোর বাইরে এখন ইউরোপ ও আমেরিকার মতো পশ্চিমা দেশগুলোতে হালাল পণ্যের বাজার বাড়ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ইসলামিক ইকোনমি রিপোর্ট ২০২০-২১ এর তথ্যানুযায়ী ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে হালাল পণ্য ও সেবা খাতে মোট ২ ট্রিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি খরচ করে। আর ২০২৪ সালে হালাল বাণিজ্যের পরিমাণ ২ দমমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেবল নীতিগত সিদ্ধান্তের অভাবে সারা বিশ্বে সম্ভাবনাময় ওই হালাল বাণিজ্যের বাজার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ওআইসিভুক্ত মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে হালাল পণ্যের বাজার ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো শিল্পোন্নত দেশগুলোতেও প্রসার লাভ করছে। এমনকি মুসলিম দেশ না হওয়া সত্ত্বেও সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার মতো অমুসলিম দেশগুলো সঠিক নীতি গ্রহণ করে হালাল পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে গেছে। বৈশ্বিক ইসলামিক অর্থনীতি সূচক (জিআইইআই) এর সর্বশেষ (২০২০) রিপোর্ট অনুযায়ী হালাল পণ্যের বাজারে শীর্ষে রয়েছে মালয়েশিয়া। শীর্ষ ১৫টি রাষ্ট্রের মধ্যে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর বাইরে সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কা থাকলেও সেখানে বাংলাদেশের ঠাঁই হয়নি। মূলত সঠিক সময়ে নীতিগত কৌশল গ্রহণ করতে না পারা, হালাল পণ্যের সার্টিফিকেশন দিতে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করতে না পারার কারণে বাংলাদেশ হালাল পণ্যের বাজার ধরতে ব্যর্থ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সূত্র জানায়, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত কয়েক বছর ধরে হালাল পণ্যে সার্টিফিকেট দিতে পৃথক কর্তৃপক্ষ করার জন্য বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে। ওসব বৈঠকে হালাল খাদ্যের সার্টিফিকেশনের জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহায়তার সুপারিশ রয়েছে। কিন্তু গত ৫ বছরে দেশে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গড়ে ওঠেনি। রপ্তানিকারকদের দাবির মুখে সম্প্রতি দেশের পণ্যের মান নির্ণয় প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই হালাল খাদ্য ও কসমেটিকসের সার্টিফিকেট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ ধরনের সার্টিফিকেট বহির্বিশ্বে কতোটা গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সংশয় রয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু হালাল পণ্য নয়, সাধারণ পণ্যের ক্ষেত্রেও বিএসটিআইর সার্টিফিকেটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির প্রযুক্তি এবং দক্ষতাগত দুর্বলতাও রয়েছে। ফলে বিশেষায়িত পণ্যের মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ওই দুর্বলতাগুলো দূর করতে বিএসটিআইর আন্তর্জাতিক এজেন্সিগুলোর সহায়তায় নিজেদের মান নির্ণয় কার্যক্রমকে আরো উন্নীত করা প্রয়োজন। যাতে এদেশের রপ্তানিকারকরা বিনা প্রশ্নে যে কোনো দেশে হালাল পণ্য রপ্তানি করতে পারে। তাহলেই শুধু বিশ্বব্যাপী হালাল বাণিজ্যের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ তা ধরতে পারবে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় হালাল পণ্য রপ্তানিকারক দেশ মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি হালাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (এইচডিসি) রয়েছে। সম্প্রতি সংস্থাটির প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বৈঠক করেছে।
অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার এইচডিসি বাংলাদেশে হালাল ইকোসিস্টেম প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মালয়েশিয়ায় হালাল সার্টিফিকেট প্রদানের কাজটি করছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত ডিপার্টমেন্ট অব ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট মালয়েশিয়া (জাকিম)। দেশটির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি হালাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার গঠন করা যেতে পারে বলে ওই চিঠিতে সুপারিশ করা হয়। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর জিএসপি সুবিধা উঠে গেলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, হালাল পণ্য রপ্তানির সম্প্রসারণ তা উত্তম বিকল্প হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম প্রয়োজন দেশের অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী হালাল ইকোসিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা।
এ প্রসঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান জানান, ইপিবি হালাল পণ্যের মার্কেটিংয়ে কাজ করছে। তবে বিশ্ববাজার ধরতে হলে এর পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বিশেষায়িত এ পণ্য ও সেবার মানের সার্টিফিকেশনের ব্যাপারেও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এতো দিন ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে হালাল পণ্যের সার্টিফিকেট আসতো। সম্প্রতি বিএসটিআই ঘোষণা দিয়েছে তারা পণ্য ও কসমেটিকসের সার্টিফিকেট দেবে। যেহেতু বিএসটিআইর মান নির্ণয় সংক্রান্ত প্রযুক্তি ও সক্ষমতা আছে, তাদের উচিত হবে ওই সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা নিয়ে হালাল পণ্যের সার্টিফিকেশন দেয়ার স্বীকৃতি আদায় করা।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম