এপি :
ভারতের ওড়িশায় শুক্রবার দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে ২৩৩ জন নিহত এবং ৯ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরও কয়েকশ মানুষ দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের মধ্যে আটকা পড়ে আছে।
প্রেস ট্রাস্ট জানায়, লাইনচ্যুত করমণ্ডল এক্সপ্রেস পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে দক্ষিণ তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই যাচ্ছিল।
শনিবার ভোরে ওড়িশার মুখ্য সচিব পি.কে জেনা একটি টুইট বার্তায় বলেছেন, দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২৩৩ জন মারা গেছে এবং প্রায় ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
দেশটির রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেছেন, একটি ট্রেনের ১০ থেকে ১২টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে এবং কিছু ছিন্নভিন্ন কোচের ধ্বংসাবশেষ কাছাকাছি ট্র্যাকের উপর পড়েছে। দ্বিতীয় ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।
প্রেস ট্রাস্ট-এর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, মালবাহী একটি তৃতীয় ট্রেনও দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছিল, তবে রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রেস ট্রাস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাইনচ্যুত যাত্রীবাহী কোচের কয়েকটি মালবাহী ট্রেন থেকে গাড়িতে আঘাত করেছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১২০০ উদ্ধারকারী ১১৫টি অ্যাম্বুলেন্স, ৫০টি বাস এবং ৪৫টি মোবাইল হেলথ ইউনিট নিয়ে রাতভর দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করেছে।
কলকাতার প্রায় ২২০ কিলোমিটার (১৩৭ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ থেকে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধারের সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ একদিকে উদ্ধারকারীরা আটকা পড়া জীবিত যাত্রীদের এবং অন্যদিকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করছে।
গ্রামবাসীরা বলেছেন, ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে একটি বিকট শব্দ শুনে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধারে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
জীবিত এক যাত্রী রূপম ব্যানার্জি পিটিআইকে বলেছে, ‘স্থানীয় লোকেরা সত্যিই আমাদের সাহায্য করেছে। তারা কেবল মানুষদের উদ্ধার করতেই সাহায্য করেনি, আমাদের লাগেজ উদ্ধার করেছে এবং আমাদের জল খাইয়েছে।’
আরেক যাত্রী বন্দনা কালেদা বলেন, ‘আমি যখন ওয়াশরুম থেকে বের হলাম, হঠাৎ ট্রেনটি কাত হয়ে গেল। এসময় আমি আমার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলাম… সবকিছু উল্টে যায়, একজনের ওপর অন্যজন পড়তে শুরু করে।’
তিনি আরও জানান, তিনি ভাগ্যবান বলে বেঁচে গেছেন।
অপর একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি যিনি তার নাম প্রকাশ করেননি তিনি বলেছেন যে আঘাতের সময় তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন।
তিনি বলেন, তিনি ভাঙ্গা অঙ্গ ও বিকৃত মুখসহ অন্যান্য যাত্রীদের দেখেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি তার সমবেদনা জানিয়েছেন।
মোদি এক টুইটে লিখেছেন, ‘আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।’
আরও জানান, তিনি রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ‘সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা’ দেওয়া হচ্ছে।
শনিবার রাজ্যটিতে এক দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
রেল নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ভারতে প্রতিবছর কয়েকশ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে।
১৯৯৫ সালের আগস্টে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ট্রেন দুর্ঘটনার একটিতে, নয়াদিল্লির কাছে দুই ট্রেনের সংঘর্ষে ৩৫৮ জন মারা যায়।
২০১৬ সালে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন ইন্দোর ও পাটনা শহরের মধ্যে লাইনচ্যুত হয়ে ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
বেশির ভাগ ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় মানবিক ত্রুটি বা সেকেলে সিগন্যালিং যন্ত্রপাতিকে।
প্রতিদিন দেশটির ১২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ১৪ হাজার ট্রেনে চড়ে ৬৪ হাজার কিলোমিটার (৪০ হাজার মাইল) ভ্রমণ করে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২