নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাঘের বৃষ্টিতে আলু চাষীদের মাথায় হাত। যদিও মাঘের বৃষ্টি মৌসুমি ফল-ফলাদির জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু তাতে উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তার মধ্যে আলুর জমিতে পানি জমে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে এমনিতেই বাজারে আলুর দাম নেই। উৎপাদন খরচ নিয়েই চাষীদের শঙ্কায় দিন কাটছে। দেশের কোথাও দু’দিনের বৃষ্টিতে অধিকাংশ আলু রক্ষতে পানি জমে যায়। তাতে মাটির নিচে থাকা আলুতে পচন ধরতে শুরু করেছে। তাছাড়া বৃষ্টিতে গম, ডাল, সরিষা, কলাই জাতীয় ফসলেরও ক্ষতি ব্যাপক। তবে বোরো ধান চাষের জন্য এই বৃষ্টি ছিলো খুবই কাক্সিক্ষত। শীত ঋতুর শেষ দিকের বৃষ্টি প্রকৃতিকে সতেজ করেছে। বিশেষ করে আসছে মধু মাসের ফল আম, জাম, লিচু ও কাঁঠাল গাছের মুকুল, ফুল ও মোচার দ্রুত বের হওয়া ও বৃদ্ধির জন্য বিশেষ ফলদায়ক হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলার মধ্যে রংপুরে ৯৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন। রংপুরে সাধারণত কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্রানুলা, লেডিরসেটা, বারি আলু, কারেস, শীল, দেশি সাদা আলুর চাষ বেশি হয়। বিশেষ করে রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, মিঠাপুকুর বদরগঞ্জ ও কাউনিয়া উপজেলাসহ এক সময়ের পড়ে থাকা তিস্তার চরাঞ্চলগুলোতে আলুর বাম্পার ফলন হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই ওই অঞ্চলের কৃষকরা আমন ধান কাটার পর শীতকালীন ফসল হিসেবে আগাম আলুর চাষ করে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর মৌসুমি আলু চাষীরাও জমি বর্গা নিয়ে ব্যাপকভাবে আলু চাষ করেন। সুষ্ঠু পরিচর্যা আর অনুকূল পরিবেশের কারনে সবখানে ফলন বেশ ভালো হয়। কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকেই বাজারে নতুন আলুর দাম না থাকায় বেকায়দায় পড়েছে আলু চাষীরা। ফলন ভালো হলেও কাঙ্খিত দাম না থাকায় কৃষকদের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ নেমে আসে।
সূত্র জানায়, রংপুর অঞ্চলে আলু সংরক্ষণের জন্য রংপুরের ৫ জেলায় ৬৭টি হিমাগার রয়েছে। তারমধ্যে রংপুরে ৪০টি এবং নীলফামারী জেলায় ১০টি। বাকি তিন জেলায় আছে ১৭টি হিমাগার। এ পর্যন্ত ওসব জেলায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আলু উত্তোলন করা হয়েছে। কারণ আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আলু পরিপুষ্ট হয়ে উঠবে। কিন্তু জমিতে বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে চাষীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
সূত্র আরো জানায়, অন্যান্য বছর মৌসুমের শুরুতে বাজারে আগাম জাতের আলু ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও চলতি বছর শুরু থেকেই আলু ৩০ থেকে ৩৪ টাকা দরে বিক্রি হয়। বর্তমানে দাম ১০ থেকে ১২ টাকায় নেমে এসেছে। আর ওই কারনে ভরা মৌসুমে আলুর দাম নিয়ে মারাত্মক শঙ্কিত হয়ে পড়েছে চাষীরা। তারওপর মাঘের এমন বৃষ্টির কারনে অনেকেই ভাবছেন এবার আলুতে লাভ তো দুরের কথা উৎপান খরচ উঠানোই মুশকিল হবে।
এদিকে আলুর অবস্থা নিয়ে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. দুলাল হোসেন জানান, বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় আলুর জমিতে পানি জমেছে। আর ওসব জমিতে পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। যে কারনে ওসব জমির আলুর গাছ পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ইতিমধ্যেই বগুড়া ও জয়পুরহাট অঞ্চলের জমি থেকে আলু উঠানো হয়েছে। তবে দেরিতে রোপন করা সরিষা ও আলুর কিছু ক্ষতি হবে। ব্লক সুপার ভাইজাররা মাঠ পর্যায়ে আলু ও সরিষার ক্ষতির পরিসংখ্যান তৈরি করছে। জরিপ সম্পন্ন হলে বলা যাবে ঠিক কত হেক্টর জমির আলু ও সরিষার ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি