জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
মিষ্টি আলু চাষ লাভজনক হওয়ায় আলু চাষে ঝুঁকছেন সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা। গত কয়েক বছর ধরে কৃষকরা বেশ উৎসাহ নিয়ে মিষ্টি আলু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। গত কয়েক বছর ধরে বাজারেও মিষ্টি আলুর চাহিদা বেড়েছে। ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী বাজারে মিষ্টি আলুর দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। মিষ্টি আলু চাষাবাদে তেমন একটা সার প্রয়োগ করতে হয় না বলে খরচ কম। এ ফসলে তেমন কোনো রোগ বালাইও দেখা যায় না। তাই এই আবাদে অল্প পুঁজি ও শ্রমে অধিক লাভ পাওয়া যায়। যে কারণে মিষ্টি আলু চাষ করে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখছেন এই বিভাগের কৃষকরা। উচ্চ ফলনশীল, ঝুঁকি ও রোগ পোকামাকড় কম, অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর সিলেট বিভাগের ১৩৮৯ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৬২, মৌলভীবাজার জেলায় ৩৬৩, হবিগঞ্জ জেলায় ১৮২ ও সুনামগঞ্জ জেলায় ৬৮২ হেক্টর জমিতে এ বছর মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি বছর ২৪ হাজার ৫৯৫ টন মিষ্টি আলু উৎপাদন হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা জমি থেকে মিষ্টি আলু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পরিবারের সদস্যরা আলু সংগ্রহের কাজে সহযোগিতা করছেন।
মিষ্টি আলু চাষ করে সফলতা পেয়েছেন দক্ষিণ সুরমার কৃষক সৈয়দুর রহমান। এবছর দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিনি দ্বিতীয় বারের মত ১৫ শতক জমিতে বারি ৫টি জাতের মিষ্টি আলুর আবাদ করেছেন।
কৃষক সৈয়দুর রহমান বলেন, কৃষি অফিস থেকে দ্বিতীয় বারের মত লতি ও সার পেয়ে ১৫ শতক জমিতে বারি মিষ্টি আলু বারি-১২, বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৬ ও বারি-১৭ জাতের চাষ করি। গত বছর আশানুরূপ ফসল পেয়ে এবছর একটু বেশি জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করি। এ পর্যন্ত চাষ বাবদ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হলেও ৫০ হাজার টাকার অধিক দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উৎপাদন খরচ কম ও ভালো মূল্য পাওয়ায় আগামীতে অনেক কৃষক এটির চাষ করবে।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ রাজিব হোসেন বলেন, মিষ্টি আলু স্বল্প জীবন কালীন এবং অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ উচ্চ মূল্যের একটি সবজি। এখানকার আবহাওয়া এবং মাটি এটি চাষের জন্য উপযোগী এবং এ ফসলে ঝুঁকিও কম। এটি মাটিকে ঢেকে রাখে বলে মাটিতে অনেক দিন রস থাকে, আগাছা কম হয় এবং এর পাতা পচে উৎকৃষ্ট সার হয়। দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক প্রজাতির মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হয়েছে কামালবাজার এলাকায়।
সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, সিলেটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুল বলেন, সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি আলু চাষ হয়েছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশা ও সুনামগঞ্জ সদর এলাকায় নতুন নতুন জাতের মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে একটু বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতগুলো এ অঞ্চলে ব্যাপক আকারে চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অনেক কৃষকই মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চল সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ মোশাররফ হোসেন খান বলেন, মিষ্টি আলু চাষে সিলেটের মাটি খুবই উপযুক্ত। বর্তমানে মিষ্টি আলুর বহুমাত্রিক ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে মিষ্টি আলুর জাত আবিষ্কার হয়েছে। বিভাগের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা নতুন নতুন জাতের মিষ্টি আলু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে এর মাধ্যমে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায় বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সিলেটের চাষিরা মিষ্টি আলু চাষে এগিয়ে এসেছেন। ফলে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে মিষ্টি আলু নিয়ে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি