মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে পদাধিকার বলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) চেয়ারম্যান এবং সচিবকে সদস্য পদে নিযোগ সংক্রান্ত আইনের বিধান কেন বাতিল নয় তা জানতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রিট আবেদনকারী নওয়াব আলী মণ্ডলের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করেন। তার ভাতা অব্যাহত রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
রিট আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম। তাকে মামলা পরিচালনায় সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট অনিক হোসেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সেলিম আজাদ।
উল্লেখ্য, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বীরমুক্তিযোদ্ধা নওয়াব আলী মণ্ডল ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান পুলিশে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি অস্ত্র লুট করে সম্মুখ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যা যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর গৌরবগাঁথা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের প্রকাশিত বইয়েও স্থান পায়।
বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার গত ২০০৫ সালে তাকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করেন এবং ওই বছরেই তার নাম গেজেটভুক্ত হয়। তিনি নিয়মিত সম্মানী ভাতাও পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু ১৮ অক্টোবর ২০২২ তারিখে জামুকা’র ৮১ তম সভায় তার গেজেটটি বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়।
ওই সুপারিশ অনুসারে মন্ত্রণালয় এবছর ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে তার গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তিনি তার গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন, ভাতা বন্ধ ও জামুকা’র চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসাবে মন্ত্রী ও সচিবের নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের সংশ্লিষ্ট বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট মামলাটি করেন।
ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম আদালতে বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ২০২২ সালের আইন দ্বারা গঠিত একটি পৃথক সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। এই আইনের ৫(১) (ক) ও ৫(১)(খ) ধারা অনুসারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও সচিব পদাধিকার বলে যথাক্রমে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)’র চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং মন্ত্রণালয়ে যদি প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকেন, সেক্ষেত্রে তারা পদাধিকার বলে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
জামুকা আইন ২০২২ এর ৬ ধারা অনুসারে জামুকা’র অন্যতম প্রধান কাজ হলো- গেজেটভুক্ত কোনো মুক্তিযোদ্ধা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয় মর্মে তদন্তে আসলে তার গেজেটটি বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবরে ‘সুপারিশ’ করা এবং নতুন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সুপারিশ করা।
যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং সচিব একইসঙ্গে জামুকা’র সর্বোচ্চ পদে আসীন, ফলে তারা জামুকা’র নির্বাহী প্রধান হিসেবে যে সুপারিশ করেন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব হিসেবে সেটাই ‘মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত’- হিসেবে প্রকাশ করেন।
তাছাড়া, জামুকা যখন একজন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবরে সুপারিশ করে, মন্ত্রণালয় কিন্তু গেজেট বাতিলের আগে তাকে কোনো ধরনের অভিযোগ খন্ডানোর বা শুনানির সুযোগও দেয় না; শুধুমাত্র জামুকা’র সুপারিশ মোতাবেক গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। জামুকা আইনের ৮ ধারা অনুসারে জামুকা’র চেয়ারম্যান অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জামুকা’র সকল নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী, অন্যদিকে মন্ত্রণালয়েরও প্রধান তিনি।
সে কারণে প্রকৃত অর্থে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে তদন্তকারী এবং বিচারক একই ব্যক্তি। এটা প্রতিষ্ঠিত ন্যায়বিচার নীতির পরিপন্থী। ফলশ্রুতিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি, মর্যাদা ও সম্মানী মন্ত্রীর একক ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
মন্ত্রী ও সচিবকে বাদ দিয়ে জামুকা’র বাকি সদস্যদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগের বিধান রাখা জরুরি।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম