November 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, May 30th, 2023, 9:38 pm

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণা বন্ধ হচ্ছে না

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বর্তমানে অনেকের কাছেই অল্প টাকা লেনেদেনের জন্য জনপ্রিয় ও সহজ সমাধান মোবাইল ব্যাংকিং। বিকাশ, নগদ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দিচ্ছে। তবে বহুদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে গড়ে উঠেছে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র। যারা সহজসরল গ্রাহকদের ঠকিয়ে লুটে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। সারাদেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমন প্রতারক চক্র। যদিও প্রতিনিয়ত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে। এসব বিজ্ঞাপনে গ্রাহকদের সবসময় সতর্ক থাকার কথা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের থেকে কেউ কখনো ফোনে কোনো তথ্য জানতে চায় না। কেউ এসবের কথা বলে কোনো তথ্য চাইলে যেন গ্রাহকরা তা না দেন। কিন্তু ব্যবহারকারীদের সরলতা ও অসচেতনতার কারণে ঠকে আসছেন তারা।

অন্যদিকে প্রতারক চক্রের দৌরাত্মের কারণে অহরহ ঘটছে টাকা খোয়ানোর মতো ঘটনা। গত কয়েক বছর ধরে চলে আসা এ প্রতারণা বন্ধ করতে পারছে না পুলিশ। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে এই প্রতারণা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের থানাগুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মোবাইল ফোনে অর্থ প্রতারণার শিকার হয়ে পুলিশি সহযোগিতার জন্য যান।

এ ব্যাপারে মোবাইল ব্যাংকিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কথার প্যাঁচে মূলত প্রতারকরা গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে। সারা বছর সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হলেও অনেক গ্রাহক প্রতারকদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। প্রতারক চক্র গ্রাহকের কাছে বিকাশের মতোই হুবহু এসএমএস কীকরে পাঠায়, সে বিষয়ে তারা বলছেন, একটা ভিন্ন ডিভাইসে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করে সেখানে কোনো গ্রাহকের নম্বর দিয়ে ঢুকতে গেলে ওই নম্বরেই একটা এসএমএস আসে। সেখানে ওটিপি নম্বর থাকে। ওই ওটিপি নম্বর দেয়ার কারণ হলো, গ্রাহক নিজেই অন্য ডিভাইসে তার অ্যাকাউন্টে ঢুকতে চাইলে সে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া। ওটিপি নম্বর নিশ্চিত করার পর ওই অ্যাকাউন্ট নম্বরেই গোপন পিনের মেসেজ আসে। এক্ষেত্রে প্রতারকরা গ্রাহকের নম্বর জোগাড় করে প্রথমে গ্রাহক থেকে কৌশলে ওটিপি নম্বর নেয়ার চেষ্টা করে।

তারপর গোপন পিন নিতে পারলেই গ্রাহক প্রতারণার শিকার হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বারবার বলে যে তাদের থেকে ফোন দিয়ে কখনও কোনো গ্রাহকের তথ্য চাওয়া হয় না। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারকরা বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে স্পুফ কল করে। যেমন বিকাশের ২৪৭ নম্বর দিয়ে গ্রাহকদের ফোন কল করে কখনও বিকাশ অ্যাকাউন্ট আপডেট করার কথা বলে ওটিপি ও পিন নম্বর নিয়ে নেয়। আবার কখনও বিকাশ এজেন্টের দোকান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে যে নম্বরে টাকা পাঠানো হয় তাকে কল করে বলা হয় ভুলে টাকা চলে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণায় যুক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে থাকে। একটি কৌশলের কথা ফাঁস হয়ে গেলে তা পাল্টে আরেক কৌশল ব্যবহার করে। জানা যায়, মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের বিভিন্ন দোকান থেকে কৌশলে গ্রাহকদের হিসাব নম্বরের ছবি তুলে প্রতারক চক্রের কাছে পৌঁছে দেয় একটি চক্র। এজন্য মাঠে কাজ করে প্রতারক চক্রের নির্ধারিত এজেন্ট। ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা জানান, বিকাশের নামে প্রতারণার উদ্দেশ্যে এক শ্রেণির যুবকদের মাঠে নামিয়ে তাদের মাধ্যমে বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বরের তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতারক চক্রটি। এতে করে ওই মোবাইল নম্বরে আর্থিক লেনদেনের তথ্য চলে যায় তাদের হাতে। এরপর লেনদেনের সঠিক তথ্য জানিয়ে বিকাশ হিসাবধারীর নম্বরে ফোন করে তাদের সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা চালায় তারা। তবে, ব্যস্ততার কারণে অনেক সময়ই খেয়াল করা যায় না যে লেনদেনের সময় কে খাতা থেকে বিকাশে লেনদেনের ছবি তুলে নিচ্ছে। টাকা পাঠানোর সময় নম্বর ভুল হলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়। তাই লেনদেনের জন্য বিকাশ নম্বরটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য একাধিকবার মিলিয়ে নিতে হয়। আর ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততার এ সুযোগে প্রতারকরা খাতা থেকে বিকাশ নম্বরে লেনদেনের তথ্যের ছবি তুলে নেয়।

এছাড়া সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিকাশের নাম ব্যবহার করে নতুন কৌশলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে প্রতারক চক্র। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে প্রচার করছে লোভনীয় বিজ্ঞাপনও। বিকাশ নাম ব্যবহার করে প্রচার করা পোস্টে ‘প্রতিদিন বিনা পরিশ্রমে ১ হাজার ২০০ টাকা পাওয়ার কথা’ও বলছে প্রতারকরা। কোথাও কোথাও রেজিস্ট্রেশন করলেই ৫ হাজার টাকা দেওয়ার লোভও দেখানো হচ্ছে। তাদের এই ফাঁদে পড়ে অনেকেই রেজিস্ট্রশন করছেন। নিজে টাকা না পেয়েও তাদের শর্ত মানতে গিয়ে টাকা প্রাপ্তির কথা বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে প্রচারও করছেন ভুক্তভোগীরা। শেষ পর্যন্ত কাক্সিক্ষত টাকা পাচ্ছেন না তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, মোবাইল ফোনে এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ না হওয়ার একমাত্র কারণ প্রতারকরা অন্যের নামে নিবন্ধন করা সিম ব্যবহার করছে। এমনকি প্রতারকরা যেসব মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রতারণা করে, সেসব নম্বর দিয়ে শুধু ভিকটিমদের সঙ্গেই কথা বলে তারা। এ কারণে মোবাইলের কললিস্টের সূত্র ধরে প্রতারকদের শনাক্ত করতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া প্রতারকেরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর সহজেই জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসছে, এরপর পুরোনো পেশায় ফিরে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের তথ্য বলছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতারণা শিকার হওয়ার অভিযোগে প্রতিনিয়ত নতুন মামলা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, অপরাধীদের শনাক্ত করে ধরাও হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না এই প্রতারণা।

ডিএমপি বলছে , অনুমতি ছাড়া ই-ট্রানজেকশনের যত ঘটনা ঘটে তার মধ্যে অল্প সংখ্যক ভুক্তভোগীই মামলা করেন। অনেকে ঝামেলা এড়াতে সাধারণ ডায়েরিও করেন না। সম্ভবত কম টাকা খোয়া যাওয়ার কারণে কিংবা অজ্ঞতার কারণে অথবা আইনি জটিলতা এড়াতে অনেকে মামলা বা অভিযোগের দিকে যান না। তারা বলছেন, তাদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারীদের সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে কোনোভাবেই কেউ তার ওটিপি কিংবা গোপন পিন নম্বর অন্য কাউকে সরকরাহ না করেন। বর্তমানে এধরনের প্রতারণা ব্যাপক হারে বেড়েছে। সারা দেশেই প্রতারক চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে লেনদেনের শীর্ষে জনপ্রিয় অবস্থানে আছে মোবাইল ব্যাংকিং। দেশের গ-ি ছাড়িয়ে এই মোবাইল ব্যাংকিং কর্মসূচিতে বাংলাদেশ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিনই মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন বেড়ে চলেছে।