আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়ার (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একাধিক বাড়ি কেনার অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অনুসন্ধান শেষে আগামী চার মাসের মধ্যে দুদককে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে নিউইয়র্কে একাধিক বাড়ি কেনা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশ-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আবদুস সোবহান মিয়ার নামে অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
আদালতে সোমবার রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
এর আগে রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
রিট আবেদনে স্বরাষ্ট্রসচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আবদুস সোবহান মিয়াকে (গোলাপ) বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে ২০১৮ সালে নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একাধিক বাড়ি কেনা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশ-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আবদুস সোবহান মিয়ার নামে অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একাধিক বাড়ি কেনা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশ-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আবদুস সোবহান মিয়ার নামে অনুসন্ধান করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। বিষয়টি নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি। এ তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি তাদের ওয়েবসাইটে করা একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
ওসিসিআরপির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি।
পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন।
এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)।
ওসিসিআরপির করা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পাঁচটি কনডোমিনিয়াম কিনেছিলেন আবদুস সোবহান।
সে সময় ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ২৪ লাখ ডলার।
এ ছাড়া আশপাশের ভবনগুলোতে ছয় লাখ ৮০ হাজার ডলার মূল্যের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন তিনি।
নিউইয়র্কে কেনা এসব সম্পত্তির নথিপত্র বলছে, সম্পত্তিগুলো নগদ অর্থে কেনা হয়েছিল।
এগুলোর মালিকানায় রয়েছেন তার স্ত্রী গুলশান আরাও।
ওসিসিআরপির করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবদুস সোবহান নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে আরও একটি সম্পত্তি (বাড়ি) কিনেছিলেন।
ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ১২ লাখ ডলার।
এছাড়া ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন। এর সাত মাস আগে বাংলাদেশে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম