November 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, December 13th, 2022, 9:50 pm

রপ্তানি পণ্যের বিপুল অর্থই দেশে আসে না

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রপ্তানি পণ্যের বিপুল পরিমাণ অর্থই দেশে আসে না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এদেশ থেকে অর্থ পাচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এমনিতেই তুলনামূলক কম এদেশের রপ্তানি খাতের পণ্যভান্ডার। রপ্তানি খাতে হাতেগোনা অন্যতম পণ্যগুলো হচ্ছে পোশাক, হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং কৃষিপণ্য। কিন্তু প্রতি বছরই ওই খাতগুলোর রফতানীকৃত পণ্যমূল্যের সঙ্গে তার বিপরীতে দেশে আসা অর্থের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রধান খাতগুলোর প্রায় সবক’টিতেই রফতানীকৃত পণ্যের মূল্য ও অর্থপ্রাপ্তির মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান রয়েছে। তবে হোম টেক্সটাইল খাতে ওই ব্যবধান সবচেয়ে বেশি। খাতটিতে গত অর্থবছরে রফতানীকৃত পণ্যমূল্যের প্রায় ৫৮ শতাংশ অর্থই দেশে আসেনি। তাছাড়া পোশাক খাতে রপ্তানি মূল্য ও অর্থপ্রাপ্তির ব্যবধান ২৩ শতাংশের বেশি। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের পার্থক্য ৪১ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্যে পার্থক্য প্রায় ১০ শতাংশ। মূলত অর্থ পাচারের কারণেই রফতানীকৃত পণ্যমূল্য ও তার বিপরীতে পাওয়া অর্থের মধ্যে বড় ব্যবধান বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের মোট রপ্তানিতে ৮২ শতাংশ তৈরি পোশাকের অবদান। বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্ববাজারে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। কিন্তু গত অর্থবছরে দেশে পোশাক রপ্তানিবাবদ অর্থ এসেছে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি ডলার। ওই হিসেবে গত অর্থবছরে তৈরি পোশাকের রফতানীকৃত মূল্যের ২৩ দশমিক ২৯ শতাংশ দেশে আসেনি। আর গত অর্থবছরে রফতানীকৃত হোম টেক্সটাইল পণ্যের অর্থমূল্য ছিল ১৬২ কোটি ডলার। বিপরীতে পাওয়া অর্থের পরিমাণ ৬৮ কোটি ডলার। ওই হিসেবে রপ্তানি ও প্রাপ্ত অর্থের পার্থক্য ৫৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যগত অর্থবছরে রপ্তানির অর্থমূল্য বিবেচনায় তৃতীয় বৃহৎ খাত ছিল। পণ্যটি রপ্তানির অর্থমূল্য ছিল ১২৪ কোটি ডলার। কিন্তু রপ্তানির বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থ ৪১ শতাংশ কম। ওই হিসেবে গত অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ৭৩ কোটি ডলার। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে সোনালি আঁশখ্যাত পাট ও পাটজাত পণ্য বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি রপ্তানি হয়। গত অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির অর্থমূল্য ছিল ১১২ কোটি ডলার। কিন্তু পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিবাবদ প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ১০১ কোটি ডলার। ওই হিসেবে রপ্তানি ও প্রাপ্ত অর্থের পার্থক্য প্রায় ১০ শতাংশ।
সূত্র জানায়, ইপিবি নিয়মিতভাবেই রপ্তানির উদ্দেশ্যে জাহাজীকৃত পণ্যের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। আর ওই রপ্তানির বিপরীতে আয় প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাণিজ্য বিরোধের প্রেক্ষাপটে মূল্যহ্রাসের কারণে ওই দুই পরিসংখ্যানে পার্থক্য থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে রপ্তানির বিপরীতে প্রত্যাবাসিত অর্থের পরিমাণও কম হতে পারে। তবে তা কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। আবার অর্থ পরিশোধের সময়সীমাও বাড়তে পারে। তবে তা নির্ধারিত সময়ে সমন্বয় হয়ে যায়। সব মিলিয়ে রপ্তানির বিপরীতে অর্থপ্রাপ্তির পার্থক্য খুব বেশি হওয়ার কথা না থাকলেও বাস্তবে তাই হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অর্থ পাচারসহ অনৈতিক ব্যবসায়িক চর্চা বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। যদিও রপ্তানি ও রপ্তানির বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে গরমিল থেকে যাওয়ার বেশকিছু কারণ রয়েছে। তার একটি হলো সময়সীমা। রপ্তানি হওয়া পণ্য আমদানিকারকের হাতে পৌঁছার পর পরিশোধিত অর্থ বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকে প্রত্যাবাসন হলে সেটিকেই এক্সপোর্ট রিসিপ্ট হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে পণ্য জাহাজীকরণ ও অর্থপ্রাপ্তির সময়ের ব্যবধানের কারণেও দেশে আসা অর্থের পরিমাণ কমে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক শর্তও রপ্তানির বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে দিতে পারে। রপ্তানির বিল অব এন্ট্রিতে ঘোষিত মোট মূল্যের একটি অংশ চালানের বীমা বাবদ বা পরিবহন খরচ বাবদ কেটে রাখার কথা রয়েছে। ওই কারণে যখন অর্থ প্রত্যাবাসন হয় তা একটি নির্ধারিত অংশ বাদ দিয়ে আসে। সব মিলিয়েই রপ্তানি ও প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে পার্থক্য থেকে যাচ্ছে। আর ওই পার্থক্য কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন।
এদিকে রপ্তানির বিপুল অর্থ দেশে না আসা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন জানান, হোম টেক্সটাইলে রপ্তানি ও অর্থপ্রাপ্তির পার্থক্য এত বেশি হলে বাকি টাকা গেল কোথায়? রপ্তানির পরিসংখ্যানটা এনবিআর ও ইপিবি থেকে পাওয়া যায় আর অর্থপ্রাপ্তির তথ্যটি বাংলাদেশ ব্যাংকের। দুই পরিসংখ্যানে এত পার্থক্য থাকার কথা নয়। ডিসকাউন্ট ৫ থেকে ১০ শতাংশ হতে পারে। তাছাড়া অনেক সময় বন্দরে পণ্য পড়ে থাকে, ছাড় করে না। অনেক সময় ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে গেলে পণ্য নেয় না। হোম টেক্সটাইলের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। এত বড় পার্থক্য হওয়ার কথা নয়। পার্থক্যটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। রপ্তানি হয়েছে কিন্তু কোনো অর্থ পরিশোধ হয়নি। অনেক সময় রপ্তানির অর্থ দাবি মীমাংসায় অনেক সময় লেগে যায়। দেখা যায় জাহাজীকরণের ৬ মাস পরে অর্থ পরিশোধ হয়।
একই প্রসঙ্গে পোশাকপণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এ বিষয়ে জানান, পার্থক্য এত বেশি হওয়ার কথা নয়। এখন অনেক ডেফার্ড পেমেন্ট (বিলম্বিত মূল্য পরিশোধ) মেনে নিতে হয়। পণ্য জাহাজীকরণের ৩০ থেকে ৯০ দিন পরও অর্থ পাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনেক ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রে এমন হয়। পণ্য জাহাজীকরণ ও অর্থ গ্রহণের সময়ে পার্থক্য হতেই পারে। ১০০টি ঋণপত্র খোলা হলে ৯৫ শতাংশেই দেখা যায় শতভাগ অর্থ পরিশোধ হয়েছে। ব্যাংক চার্জ কাটার কারণে অর্থপ্রাপ্তি কম হতে পারে। এটা নিশ্চিত যে অর্থ পরিশোধ না হওয়ার কোনো কারণ নেই।