নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভারতের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের সরাসরি রেল যোগাযোগ। এখন প্রতিবেশী অন্য দেশের সঙ্গেও এই সুবিধা পেতে কাজ করছে বাংলাদেশ। এজন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত হয়ে নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। জানা গেছে, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ভারত, নেপাল ও ভুটানের দূরত্ব খুবই কম। বাংলাবান্ধা থেকে কয়েকশ গজের মধ্যেই ভারত সীমান্ত। এই স্থলবন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব মাত্র ৬৮ কিলোমিটার এবং চীন সীমান্ত মাত্র ২০০ কিলোমিটার। সম্ভাবনাময় এই বন্দরটি পাঁচটি বন্ধুপ্রতিম দেশকে একই সূত্রে আবদ্ধ করতে পারে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রেলপথে স্বল্প সময়ে যাওয়া যাবে চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে। বাংলাবান্ধা থেকে ঢাকা আসতে যে সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে তার অর্ধেক সময়ে চীনে পৌঁছে দেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ভারতে যেতে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট আর নেপাল ও ভুটানে যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। সেজন্যই বাংলাবান্ধা হয়ে চারটি দেশের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপন করতে চায় বাংলাদেশ সরকার। ফলে প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা রুটে ৫৭ কিলোমিটার নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মিত হবে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে তিন হাজার ৭৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন এক হাজার ৩১৩ কোটি ২৪ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ দুই হাজার ৪৪০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। বৈদেশিক ঋণের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ছাড়াও যে কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের সূত্রমতে, প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদনের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের পিডিপিপি (প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) নিয়ে এডিবির সঙ্গে অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা চলমান। শুধু এডিবি নয়, সহজ শর্তে প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্য যে কোনো উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে দুই হাজার ৪৪০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বৈদেশিক অর্থায়ন নেওয়া হবে। প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম পরামর্শক সেবার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ নকশা। এ ছাড়া সম্ভাব্য সমীক্ষা, হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে, ম্যাথমেটিক্যাল মডেলিং, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, পরিবেশগত সমীক্ষা, সামাজিক ও আবাসিক সেবা সমীক্ষাও করা হবে। ইতোমধ্যে মূল প্রকল্প শুরুর আগে রেলওয়ের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল জোনে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে সরকার। সমীক্ষা প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদকাল জুন ২০২২ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের অধীনে চারটি সমীক্ষা প্রকল্প করা হচ্ছে। যার মধ্যে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অন্তর্ভুক্ত। সমীক্ষা প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার পরই মূল প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলপথে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরিতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম উদ্যোগ পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ। এই রেলপথ নির্মাণ করা হলে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগে নতুন রুট তৈরি হবে। ভারতের সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের রেলপথ রয়েছে। বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারতকে সংযুক্ত করতে পারলে তখন অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ সৃষ্টি হবে। ভারতের রেলপথের বিভিন্ন পয়েন্ট যুক্ত হবে। আন্তর্জাতিক মালবাহী গাড়ি ও যাত্রীবাহী ক্যারেজ চলাচল করবে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে মালামাল আমদানির পাশাপাশি ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রীরা যাতায়াত করছেন। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হয়ে সোনামসজিদ সীমান্ত পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে। ফলে এটি বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে (বিবিআইএন) রেল সংযোগের অন্যতম রুট হবে। স্থলবন্দরটিতে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা গেলে যাত্রী পরিবহন ছাড়াও আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে মালামাল পরিবহন হবে সহজ ও সাশ্রয়ী। তবে নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও চলমান একটি প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের শেষ রেলওয়ে স্টেশন নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ি রেলপথে মালবাহী রেলগাড়ী চলাচল করলেও প্রায় এক বছর থেকে পাইল ক্যাপের ওপর ৯২টি পিলারের রড নিয়ে থমকে আছে চিলাহাটি স্থলবন্দরের আধুনিক রেল স্টেশনের কাজ। স্টেশনের মূল দ্বিতল আধুনিক ভবণ নির্মাণের জন্য ১৭৫টি পাইলিং কাজের পর থেকে রেল স্টেশনের সব কাজ বন্ধ রয়েছে। জানা গেছে, প্রকল্পটির বরাদ্দ হওয়া অর্থ ৮০ কোটি থেকে বৃদ্ধি করে প্রায় ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দের অনুমোদন না পাওয়ায় কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চিলাহাটি স্টেশনের কাজগুলো শেষ হলেই এই রেলপথ দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নতুন যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কাজ শেষ না হওয়ায় দুই দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী রেলওয়ে সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের মোংলা পোর্ট হয়ে নেপাল-ভুটানের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগাযোগ অবকাঠামো মনোনয়নের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সুবিধা জোরদারের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ২৭ জুন চিলাহাটি স্টেশনের কাজ শুরু করা হয়। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল সংযোগ স্থাপনের পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মালবাহী ও ২০২১ সালের ২৭ মার্চ যাত্রীবাহী রেলগাড়ী চলাচলের উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাসট্রাকচারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রায় ২০ কোটি টাকার অতিরিক্ত কাজ করা হয়েছে। বাড়তি প্রকল্পর কাজগুলো ডিপিপি থেকে আরডিপি না হওয়ায় নতুন করে অর্থ সংস্থান হচ্ছে না তাই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় জমির মালিকদের বাধার মুখে দাঁড়িয়ে আছে লুপ লাইন বসানোর কাজ। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের সিংহভাগ শ্রমিক অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেনি।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম