নিজস্ব প্রতিবেদক:
রেলের পূর্বাঞ্চলে ট্রেনের গতি বাড়াতে পুরনো রেল সেতুগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই লক্ষ্যে বুয়েটের একদল পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। কারণ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি সেতু বিদেশ থেকে আমদানি করা নতুন ইঞ্জিনগুলোর ভার বহনে সক্ষম নয়। সেজন্যই ওসব সেতু সংস্কারের পাশাপাশি ভার বহনের কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তাছাড়া ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেতুগুলোর জায়গায় নতুন করে সেতু নির্মাণ করা হলে রেলওয়ের বহরে নিত্যনতুন যুক্ত হওয়া লোকোমোটিভগুলো দিয়ে বেশ দ্রুততই ট্রেন চলাচল করানো সম্ভব হবে বলে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ে দীর্ঘদিন ইঞ্জিন বা লোকোমোটিভ সঙ্কটে ভুগছিল। বর্তমানে বিদেশ থেকে ইঞ্জিন আমদানিতে রেল কিছুটা গতি পাচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত বিকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনে চলতে থাকা পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ের বহরে মোট ২০টি ইঞ্জিন যুক্ত হয়েছে। সম্প্রতি আরো ১০টি ইঞ্জিন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা হয়েছে। যা মেকানিক্যাল বিভাগে নেয়া হয়েছে। ফলে রেলের গতি বাড়ার পাশাপাশি যাত্রী সেবার মান আরো বাড়বে। তবে ওসব নতুন ইঞ্জিন নিয়ে পুরনো সেতুতে যথাযথ গতি চলাচল সম্ভব কিনা বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখছে। পাশাপাশি সঙ্কট নিরসনে পুরনো ইঞ্জিন বাদ দিয়ে ট্রেনে পুরোপুরি গতি ফেরাতে কাজ চললেও আমদানি করা কিছু নতুন ইঞ্জিন ট্রায়াল বেসিসে কয়েকটি রুটে চলাচল করছে।
সূত্র জানায়, রেলের পূর্বাঞ্চলে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কালুরঘাট রেল সেতু, ভৈরব পুরাতন সেতু, শম্ভুগঞ্জ সেতু, কুশিয়ারা সেতু, ঘোড়াশাল সেতু, ঘুমঘাট সেতু এবং ছাতক-সিলেট রুটের ২৮ নম্বর সেতু আমদানি করা ইঞ্জিনগুলোর ভার বহনে সক্ষম নয়। বিদ্যমান পুরনো ইঞ্জিনের তুলনায় এক্সেল প্রতি লোডের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ওই সেতুগুলো দিয়ে চলাচল করতে পারবে কিনা তা আরো কিছুদিন পর জানা যাবে। সেজন্য গত জুনে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ বুয়েটের পরামর্শক নিয়োগে মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেছে। আর রেলপথ বিভাগ তার অনুমোদনও দিয়েছে। বুয়েটের বিআরটিসি বিভাগকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় তারা ওই বিষয়ে কাজ করছেন। বুয়েটের কারিগরি দল বেশি লোডের ইঞ্জিনগুলো বিদ্যমান সেতুগুলোতে চলাচলের উপযোগী কিনা তা যাচাই করছে। তবে সেতুগুলোকে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করে উপযোগী করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। অবশ্য কিছু সেতু নির্মাণাধীন রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন হলে ওসব রুটে আমদানি করা লোকোমোটিভে ট্রেন চলাচল করবে। তবে পরামর্শক দল এবং অভিজ্ঞদের সিদ্ধান্তের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। সরকার প্রায় ৬০ বছরের বেশি পুরনো ইঞ্জিনগুলো বাদ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। তাছাড়া ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেতুগুলোতে ১১ দশমিক ৯৬ টন এক্সেল লোডবিশিষ্ট লোকোমোটিভ চলাচলে সক্ষম হলেও বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা ইঞ্জিনগুলোর গড় ওজন ১০০ টনেরও বেশি। তাই ওসব সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি থেকে যায়।
সূত্র আরো জানায়, আমদানি করা ইঞ্জিনগুলোর গড় ওজন ১০০ টনের বেশি, প্রতি এক্সেল ১৫ থেকে ১৬ টন। আর আগের ইঞ্জিনগুলো ওজন প্রতি এক্সেল ১১ দশমিক ৯৬ লোডের। বিদ্যমান ইঞ্জিনগুলো গড় ওজন ৭০ থেকে ৭২ টন। সেজন্যই ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেল সেতুগুলো দিয়ে অতিরিক্ত লোড বহন করার আপাতত অবকাঠামোগত সংস্কার করে চলাচল উপযোগী করার কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। কারণ নতুন কেনা ইঞ্জিনগুলো অনেক ভারি ও দ্রুতগতি সম্পন্ন। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে কালুরঘাট হয়ে ট্রেন যাবে। কিন্তু কালুরঘাট সেতু ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটে যাওয়া ট্রেনের ভার সইবে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। রেলওয়ে এই সেতুতে নিরাপদ ট্রেন চলাচল করতে বুয়েটের পরামর্শকদের সহায়তা চেয়েছে। তারা ইতোমধ্যে পরিদর্শনও করেছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি