অবগুণ্ঠন খুলেছে মাসখানেক আগে। এখন পুরোনো হওয়া গ্রামীণ বধূর মতোই মাথার আঁচল লুটোপুটি খাচ্ছে ধরিত্রির বুকে। খোঁপা থেকে যেমন করে বাসি ফুল ঝরে যায়, তেমনি শীষ থেকে ঝরতে শুরু করেছে শরৎকন্যা কাশের তুলো।
একদিকে শরতের বিদায়ী ঘণ্টা অন্যদিকে কার্তিকের আগমনী ঘণ্টা। তবে বাঙালির আনন্দঘণ্টা বাজে বছরজুড়েই। পার্বণের সংখ্যা এখন আর হাতে গুণে বলা যায় না ১৩টি। প্রকৃতির পরতে পরতে রয়েছে পার্বণের ঘণঘটা।
তেমনই কাশফুল ফুটলেই এক উৎসবে মেতে উঠে বাঙালি। রাজধানীর আফতাবনগরে গিয়ে দেখা গেল সেই উৎসবের ছটা।
অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া অর্পা ও কলেজ পড়ুয়া সামিয়া নতুন শাড়ি-গয়না কিনেছে কাশবন ভ্রমণ উপলক্ষে। সেজেগুজে কাশবনের বিভিন্ন স্থানে তাদের ছবি তুলতে দেখা গেল।
অর্পা জানায়, কাশফুল ফোটা মানেই একটি উৎসব। পাল্টে যায় প্রকৃতির রূপ। প্রকৃতির কাছে যেতে ভালো লাগে, মনটা ভালো হয়ে যায়।
সামিয়াও জানান একই রকম অনুভূতি। বড়বোন, ভাগ্নি ও ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে তাই বিকালটা আনন্দে কাটাতে আফতাবনগরে চলে এসছেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাল্টেছে প্রকৃতির চরিত্র। আগের মতো শরতের বিকেলে এখন শুধুই স্নিগ্ধতার আবরণ থাকে না। ধাওয়া করে বেড়াই ভাপসা গরমও। তাতে কিইবা আসে যাই তারুণ্যের। ফিকে করতে পারে না উৎসবের আমেজ।
বিকেলের নম্রতার সঙ্গে যোগ হয়েছে কাশফুলের শুভ্রতা। তবে এই ধবলের রাজ্যে সবুজের উঁকিঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে সৌন্দর্যের মাত্রা। সঙ্গে রয়েছে কলমি, পুটুশের ঝাড়, আকন্দসহ নানা বুনো ফুলের বাহারি সাজ।
এরই টানে ছুটে এসেছে শিশু, কিশোর, তরুণ থেকে প্রবীণরাও। কাশের সঙ্গে মিলিয়ে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা এক ক্ষুদে বাহিনীর দেখা মিলল। প্রান্তরজুড়ে এত সাদা দেখে অভিভূত এই ক্ষুদের দলের যেন ক্লান্তি নেই কোনো কিছুতেই। এই দলের সদস্য আবির আয়মান আধো আধো বোলে বলল, ‘খুব ভালো লাগছে।’
মা জেবা তাসনিয়া ও বাবা হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে কাশবন ভ্রমণে এসেছে আবির। সঙ্গে আরও ৫ ভাই-বোন। ক্লান্তিকে ছুটি দিয়ে ছুটোছুটির সঙ্গে মিতালি করেছে তারা। এই ক্ষুদেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটছে বিকালও।
বিকাল গড়িয়ে কাশবনে পৌঁছে গেছে গোধূলি। অথচ কারোর যেন তাড়া নেই বাড়ি ফেরার। বিকেলের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে বিদায় নিতে চলেছে আলো। খানিকটা ধূসর হয়েছে প্রকৃতি। এমন মোহনীয় আলোয় ছবি তুলতে দেখা গেল উত্তরবাড্ডার গৃহবধূ রূপাকে।
তিনি জানালেন, প্রতি বছরই আসেন কাশবনে। মনটা ভালো হয়ে যায় মুক্ত প্রকৃতিতে এলে। প্রায় বদ্ধ নগরজীবনের খানিকটা আড়মোড়া ভাঙায় প্রকৃতির পালাবদল। জীবনে আনে উৎসবের রং।
প্রকৃতি রূপ বদল শুধু চোখের শান্তি বা মনের ক্ষুধাই মেটায় না; কারো কারো হয়তো পেটের ক্ষুধাও মেটাতে কিছুটা সহযোগী হয়। হাতে হাতে ক্যামেরাযুক্ত মুঠো ফোন থাকলেও আরও একটু ভালো ছবির আশায় কাশবন ভ্রমণে আসা অনেকেই নির্ভর করছেন পেশাদার চিত্রগ্রাহক ইয়াকুব মিয়াজির ক্যামেরার উপর।
তিনি ছবি প্রতি নিচ্ছেন ২০ টাকা। নানা ভঙ্গিতে তার কাছে ছবি তুলছেন দর্শনার্থীরা।
গোধূলির রং ধূসর থেকে আরও খানিকটা গাঢ় হয়ে হয়েছে। এবার ঘরে ফেরার পালা। বেড়েছে রিকশার টুংটাং শব্দ। অনেকেই হাতে নিয়ে ফিরছেন কাশের শীষ। সন্ধ্যার হাওয়ায় কান পাতলে যেন শোনা যায়,
“আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা
নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা”
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি