নিজস্ব প্রতিবেদক:
শিপিং সেবা বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বহরে যুক্ত করা হচ্ছে অর্ধডজন নতুন জাহাজ। একটি মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজের বহর গড়ে তুলতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিএসসি এখন নানামুখী চেষ্টা চালাচ্ছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলার দূত ও ১৯৭৩ সালে বাংলার সম্পদ জাহাজ দিয়ে বিএসসি প্রথম কার্যক্রম শুরু করে। বিএসসির বহরে একসময় সর্বোচ্চ ৪৪টি পর্যন্ত জাহাজ ছিল। কিন্তু ১৯৮০ সালে জাহাজের সংখ্যা ২৬টিতে নেমে আসে। আর এভাবে কমতে কমতে এক সময় বিএসসি মাত্র ২টি জাহাজ নিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে চলতে থাকে। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে সরকার বিএসসিকে নতুন করে সাজাচ্ছে। ২০১৮ সালে একটি এবং ২০১৯ সালে ৫টি জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হয়। তার আগে দীর্ঘ ২৭ বছর বিএসসি বহরে নতুন কোনো জাহাজ যুক্ত হয়নি। চীনের ঋণ সহায়তায় বহরে যুক্ত হওয়া জাহাজগুলোর মধ্যে ছিল ৩টি প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাঙ্কার এবং ৩টি বাল্ক ক্যারিয়ার। বহরে নতুন জাহাজ যুক্ত হওয়ায় লাভের মুখ দেখছে বিএসসি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিএসসি ৭১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নিট লাভ করে। আর সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে বিএসসি সব ধরনের কর পরিশোধ ও পরিচালন ব্যয় বাদ দিয়ে ৭২ কোটি ২ লাখ টাকা লাভ করে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিএসসির বহরে একের পর এক জাহাজ যুক্ত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি লোকসান কাটিয়ে কয়েক বছর ধরে লাভের মুখ দেখছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন বিএসসি বহরে আরো অর্ধডজন নতুন জাহাজ যুক্ত হতে যাচ্ছে। বর্তমানে বিএসসির বহরে রয়েছে ৮টি জাহাজ। সেগুলো হলো এমভি বাংলার জয়যাত্রা, এমভি বাংলার সমৃদ্ধি, এমভি বাংলার অর্জন, এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা, এমটি বাংলার অগ্রদূত, এমটি অগ্রগতি, এমটি বাংলার জ্যোতি এবং এমটি বাংলার সৌরভ। জাহাজগুলোর মধ্যে ৩টি বাল্ক ক্যারিয়ার, ২টি লাইটারেজ ক্রুড অয়েল ট্যাঙ্কার এবং ৩টি প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাঙ্কার।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে নতুন ইউনিট নির্মাণের মাধ্যমে অতিরিক্ত অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে ক্রুড অয়েল পরিবহনে মাদার অয়েল ট্যাঙ্কারের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়ীতে ৩টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ওসব প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা আমদানি করা হবে। ওসব কয়লা পরিবহনেও জাহাজ লাগবে। দেশে আমদানিতে দেশীয় জাহাজই অগ্রাধিকার পাবে। সেজন্যই ওই প্রকল্পগুলোকে সামনে রেখে বিএসসির ব্যস্ততা বাড়ছে।
এদিকে এ বিষয়ে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর সুমন মাহমুদ সাব্বির জানান, ব্লু ইকোনমি ধারণা বাস্তবায়নে এসডিজি গোল ২০৩০ এবং রূপকল্প ২০৪১-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি শিপিং সংস্থা গড়ে তুলতে বিএসসিকে একটি মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজ বহরে পরিণত করা হচ্ছে। চীন থেকে বেশি ধারণ ক্ষমতার আরো ছয়টি জাহাজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তার মধ্যে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার, দুটি মাদার ট্যাঙ্কার এবং দুটি মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাঙ্কার রয়েছে। ওসব জাহাজ দ্রুত যাতে বহরে যুক্ত করা যায় ওই প্রক্রিয়া চলছে।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিপিং খাতে সেবা বাড়াতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বহরে নতুন নতুন জাহাজ যুক্ত করা হচ্ছে। নতুন জাহাজ যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিএসসির জাহাজের বহর সমৃদ্ধ হওয়ায় বাড়ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। পাশাপাশি বিস্তৃত হচ্ছে পরিধিও। আরো নতুন ৬টি জাহাজ আসছে। হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা শিপিং করপোরেশনকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি