প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সব গৃহহীন মানুষ যাতে জমিসহ বাড়ি পায় তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। আমরা এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি।’
ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৪র্থ দফায় আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি দুই দশমিক ৩৬ শতাংশ জমি প্রদানের সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তার পক্ষে জনপ্রতিনিধিরা-মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান–এর পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সারা দেশে ৪৯৩টি উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের স্থানে উপস্থিত থেকে তারা সুবিধাভোগীদের হাতে বাড়ির সার্টিফিকেট ও জমির কাগজপত্র তুলে দেন।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ৪র্থ ধাপের ঘর বিতরণের ফলে নয়টি জেলা ও ২১১টি উপজেলায় এখন বাড়ি ও ভূমিহীন কেউ নেই।
এর আগে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রকল্প আশ্রয়ণ-২-এর আওতায় প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় দফায় ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং তৃতীয় দফায় ৫৯ হাজার ১৩৩টি বাড়ি প্রদান করেন শেখ হাসিনা।
চতুর্থ দফায় ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর বিতরণের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি।
প্রধানমন্ত্রী আরও সাতটি জেলা এবং আরও ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন। সাতটি জেলা হলো মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা।
এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরাকে গৃহহীন-ভূমিহীন মুক্ত জেলা এবং ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা ঘোষণা করেন।
কৃতিত্বের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্যান্য কারণে এসব এলাকার কোনো পরিবার গৃহহীন ও ভূমিহীন হলে ওই পরিবারকে জমিসহ বাড়ি দেয়া হবে।
তিনি সকলকে সারাদেশে ভূমিহীন পরিবার বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বা অন্য কোনো কারণে গৃহহীন হয়ে পড়া এলাকাগুলো খুঁজে বের করতে বলেন। তিনি আরও বলেন, যেগুলো ইতোমধ্যে গৃহহীন ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার তাদের বাসস্থান দিবে।
অনুষ্ঠানে তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশালের বানারীপাড়ার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর বিতরণের মাধ্যমে, মোট এক লাখ ৯৬ হাজার ৮২৫জন মানুষ এখন তাদের নিজস্ব জমিতে আধা-পাকা বাড়ি পেয়ে আশ্রয় পেয়েছে।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।
বুধবার যে ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে নেত্রকোনা জেলার ৮টি উপজেলা, নরসিংদীর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, রাজশাহী ও পিরোজপুরে ছয়চি উপজেলা; গাজীপুর, বগুড়া ও কুষ্টিয়ায় পাঁচটি উপজেলা; গোপালগঞ্জ,
মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, বরিশাল ও সিলেটে চারটি করে উপজেলা; ঢাকা, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, চাঁদপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও হবিগঞ্জের তিনটি করে উপজেলা; মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী, মেহেরপুর ও ঝালকাঠিতে দুটি করে উপজেলা; এবং শরীয়তপুর, কক্সবাজার, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, ভোলা, বরগুনা, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের একটি করে উপজেলা রয়েছে।
যে ৫২টি উপজেলাকে আগে গৃহহীন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, তার মধ্যে পঞ্চগড় জেলার পাঁচটি; ময়মনসিংহ, মাগুরা, ফেনী ও চট্টগ্রামে চারটি করে; রাজশাহীতে তিনটি; মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও বগুড়ায় দুটি করে; এবং ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, জামালপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, নাটোর, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও ঝালকাঠির একটি করে উপজেলা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন।
বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়িঘর ও জমির মালিকানা দেয়ার উদ্যোগ নেন।
এরপর থেকে এ পর্যন্ত মোট সাত লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হজার ৫০৫ (একটি পরিবারে পাঁচজন ব্যক্তি হিসাবে আনুমানিক)।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে প্রায় পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭ পরিবারকে সরাসরি পুনর্বাসন করা হয়েছে। যেখানে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে দুই লাখ ১৬ হাজার ৭০৪ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২