November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, February 29th, 2024, 8:37 pm

সাজার মেয়াদ শেষ হওয়া ১৫৭ বিদেশিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ

দেশের কারাগারগুলোতে বিভিন্ন অপরাধের সাজা খাটা শেষে প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় থাকা ১৫৭ জন বিদেশি কারাবন্দীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গত ২১ জানুয়ারি কারা মহাপরিদর্শকের কার্যালয়ের দাখিল করা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার বিভূতি তরফদার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত। পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে এ নির্দেশনা পালন করতে বলা হয়েছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য হাইকোর্ট ২৮ মে দিন ধার্য করেছেন। এর আগে গত ২১ জানুয়ারি প্রতিবেদনে জানানো হয়। দেশের কারাগারগুলোতে বিভিন্ন অপরাধের সাজা খাটা শেষে প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় থাকা ১৫৭ জন বিদেশি কারাবন্দি রয়েছেন। আটককৃতদের মধ্যে ১৫০ জন ভারতের, পাঁচজন মিয়ানমারের ও একজন করে পাকিস্তান ও নেপালের নাগরিক রয়েছেন। ১৫৭ জনের মধ্যে নারী রয়েছেন ১৯ জনের মতো। উচ্চ আদালতের আদেশের পর কারা অধিদপ্তর এই প্রতিবেদন পাঠায়।

কারাবন্দী এসব বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে দি কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট-১৯৫২, পাসপোর্ট আইন-১৯৫২ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় হয়েছে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল দিয়ে অনুপ্রবেশের দায়ে ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর থানার বাসিন্দা গোবিন্দ উড়িয়াকে গ্রেপ্তার আটক করে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা।

ওই দিনই আটক ব্যক্তিকে শ্রীমঙ্গল থানায় সোপর্দ করে তার নামে মামলা করে বিজিবি। তদন্তের পর একই বছর ৪ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ২৪২ ধারা ও দি কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট, ১৯৫২ আইনের ৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

বিচার শেষে মৌলভীবাজারের চতুর্থ বিচারিক হাকিম এম মিজবাহ উর রহমান দোষ স্বীকার ও অতীতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ না থাকায় আদালত গোবিন্দ উড়িয়াকে ২ মাস ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এ রায়ের পর দুই বছর কেটে গেলেও প্রত্যাবাসন হয়নি গোবিন্দ উড়িয়ার। রায়ে বলা হয়, তাই তার প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপারকে নির্দেশ দেন আদালত।

এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে হওয়া প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ১১ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিভূতি তরফদার। সাজা ভোগ করা কারাবন্দি গোবিন্দ উড়িয়ার কারামুক্তি ও তার প্রত্যাবাসনে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করা হয় রিটে। গত ১৫ জানুয়ারি এ রিটে প্রাথমিক শুনানির পর রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। অন্তর্বর্তী আদেশে গোবিন্দ উড়িয়াকে কারামুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। আর দণ্ড বা সাজাভোগ করার পরও প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা না করে কারাবন্দি রাখা হয়েছে, এমন বিদেশি নাগরিকদের তালিকা দিতে বলেন আদালত। কারা মহাপরিদর্শককে এ নির্দেশ দিয়ে আগামী ১০ মার্চ পরবর্তী আদেশের তারিখ রাখা হয়। এরপর আদালতে দাখিলের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠায় কারা অধিদপ্তর।

কারাগার থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের ত্রিপুরার বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী মো. সাজ্জাদ হোসেন তার কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষের পরও প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশের কারাগারে রয়েছেন। ২০০৩ সালের ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট-১৯৫২ এর অধীনে দায়ের করা মামলায় খাগড়াছড়ি আদালতের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট সাজ্জাদকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা করেন। ২০০৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে তার কারাদণ্ড কার্যকর হয় এবং ২০০৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তা শেষ হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি এখনও ফেনীর কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি কেবল একজনের গল্প নয়, এরকম আরও ১৫৬ জনের দুর্দশাও এমনই। তাদের সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও বাংলাদেশের কারাগারে সময় কাটাচ্ছেন।

—–ইউএনবি