November 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, July 31st, 2023, 8:41 pm

সুন্দরবনে গত ৫ বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে গত ৫ বছরে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১১৪ টিতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ ৫ বছরে সুন্দরবনের বাঘ বেড়েছে অনেক।

সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ রয়েছে বলে ক্যামেরা ট্রাকিং জরিপে উঠে এসেছে।

সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারীদের দৌরাত্ম্য কমা এবং বনবিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

বিশেজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। তবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমিকে তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ করা গেলে দ্রুত বাঘের সংখ্যা আরও বাড়বে।

বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘ গণনার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পশ্চিম বিভাগের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর থেকে পূর্ব বিভাগে গণনার কাজ শুরু করা হবে। তবে পশ্চিম বিভাগে ক্যমেরা ট্র্যাকিং শেষে বাঘ বৃদ্ধি পাওয়ার আশা করছে বন বিভাগ।

সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অবাধ বিচরণ ও প্রতিনিয়ত বাঘের শাবকের দেখা মিলছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে ও বাওয়ালীরা।

বন বিভাগের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি এবং এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়।

১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান।

২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি।

১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়।

২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদশ অংশে বাঘের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে দাড়ায় ১০৬ টিতে। হঠাৎ করে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০টি থেকে ১০৬ টিতে এসে দাঁড়ালে সারাবিশ্বে হৈচৈ পড়ে যায়।

সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১১৪ টিতে।

চলতি বছর শুরু করা হয় পুনরায় বাঘ গননার কাজ। বর্তমানে সুন্দরবনের বাঘের আনাগোনা যে ভাবে দেখা যাচ্ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চলতি বছর পর্যটকরা একসঙ্গে তিনটি বাঘের চলাচল দেখতে পেয়েছে। টহল ফাঁড়ি এলাকায় একসঙ্গে ৩টি বাঘের হুঙ্কারসহ প্রতিনিয়ত বাঘের সঙ্গে দেখা মিলছে জেলে বাওয়ালী ও মৌয়ালীসহ পর্যটকদের। তাই সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছে স্থানীয় অধিবাসীরা।

সুন্দরবন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে মাত্র ১০টি। ১৪টি বাঘ পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা, একটি নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে এবং বাকি ২৫ বাঘ হত্যা করেছে চোরা শিকারীরা।

খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) এজেডএম হাছানুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার বাঘের সংখ্যা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে, যার সুফল দেখা যাচ্ছে। যেমন-সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করা ইত্যাদি।

বন বিভাগ বাঘ সুরক্ষায় যেভাবে কাজ করছে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সুন্দরবনসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতি অসিত কুমার মণ্ডল বলেন, লোকালয়ে আসা বাঘ নিরাপদে ফেরাতে ইতোমধ্যে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যার ফলে এখন আর মানুষ বাঘ পিটিয়ে মারে না।

কয়রার সুন্দরবন মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য রেজাউল করিম কারিম বলেন, সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে এটা নিঃসন্দেহে খুশির বিষয়। বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবনকে নিরাপদ করতে পারলে অবশ্যই বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

কয়রা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, চোরা শিকারীদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে বাঘ। তারা বাঘ শিকার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করে থাকে। এই চক্র যাতে করে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে না পারে, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারিসহ টহল কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

এছাড়া বাঘ যাতে তার স্বাভাবিক পরিবেশে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। সুন্দরবনের পাশে যেকোন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন গড়ে তুলতে না পারে সে বিষয়টিও নজরে আনা প্রয়োজন।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল ফাঁড়ি। পাশাপাশি চোরা শিকারীদের তৎপরতা বন্ধে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট প্রেট্রোলিং ও ফুট প্রেট্রোলিং চালু করা হয়েছে।

মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে জুন থেকে আগস্ট, এই ৩ মাস সুন্দরবনের সকল পাস-পারমিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী অবাধে চলাচল করতে পারবে।

সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীর জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করতে কাজ করছে বন বিভাগ।

—-ইউএনবি