November 3, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, December 17th, 2023, 8:54 pm

হারের চক্রেই টাইগাররা

অনলাইন ডেস্ক :

প্রথম ওভারেই দুই উইকেট! মেঘলা আকাশের নিচে গুমোট আবহাওয়ায় আলো ঝলমলে শুরু বাংলাদেশের। ধারাভাষ্যকক্ষে মার্ক রিচার্ডসন বললেন, “বাংলাদেশ মিনস বিজনেস দিস টাইমৃ।” কিন্তু তিনি ভুল ছিলেন। বাংলাদেশ পারল না নতুন কিছু করতে। বরং পেশাদারি ব্যাটিংয়ে উইল ইয়াং ও টম ল্যাথাম গড়ে তুললেন দুর্দান্ত এক জুটি। ক্রমেই মলিন হয়ে বাংলাদেশ ফিরে গেল সেই চেনা চেহারায়। নিউ জিল্যান্ডে জয় অধরা রয়ে গেল আরও একটি ম্যাচে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন (ডিএলএস) পদ্ধতিতে ৪৪ রানে হারাল নিউ জিল্যান্ড। এই নিয়ে নিউ জিল্যান্ডে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ১৭ ওয়ানডে খেলে সবকটিই হারল বাংলাদেশ। ডানেডিনে রোববার তিন দফায় বৃষ্টিতে বিঘœ হওয়া ম্যাচ নেমে আসে ৩০ ওভারে। নিউ জিল্যান্ড তোলে ৭ উইকেটে ২৩৯ রান। ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৫। ৩০ ওভারে তারা যেতে পারে ২০০ পর্যন্ত।

শুরুর জোড়া ধাক্কা সামলে ১৪৫ বলে ১৭১ রানের জুটি গড়েন ইয়াং ও ল্যাথাম। তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ১৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৪ বলে ১০৫ রান করেন ইয়াং। তার আগেই শতরানের সম্ভাবনা জাগিয়ে কাছে গিয়ে আটকে যান ল্যাথাম। নিউ জিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ৯ চার ও ৩ ছক্কায় করেন ৭৭ বলে ৯২। বাংলাদেশের ইনিংসের চিত্র ঠিক উল্টো। ৫ জন ব্যাটসম্যান ২০ ছুঁলেও ফিফটি করতে পারেননি একজনও। অর্ধশত রানের জুটি হয়েছে ¯্রফে একটি, সেটিও থমকে গেছে ৫৬ রানে। নিউ জিল্যান্ড বড় পার্থক্য গড়েছে শেষ ১০ ওভারে।

ইয়াং-ল্যাথামের ঝড়ের সঙ্গে মার্ক চ্যাপম্যানের ক্যামিও মিলিয়ে ১০ ওভারে আসে ১২৮ রান। লক্ষ্যটা বাংলাদেশের নাগালের বাইরে চলে যায় মূলত সেখানেই। বিশাল রান তাড়ার শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। খরুচে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ ছাড়ার পর ব্যাটিংয়েও শূন্য রানে আউট হয়ে ফেরার ম্যাচে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করেন সৌম্য সরকার। আউট হন চেনা ভঙ্গিতেই, জায়গায় দাঁড়িয়ে বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে। দলে ফেরা আরেক ওপেনার এনামুল হক বল আকাশে তুলে জীবন পান ৮ রানে। এরপর দারুণ কিছু শট খেলে রান বাড়াতে থাকেন তিনি। কিন্তু আরেকপ্রান্তে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। লেগ স্পিনার ইশ সোধির প্রথম ওভারেই রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে উইকেট হারান বাংলাদেশ অধিনায়ক।

সোধিকেই চার ও ছক্কা মেরে লিটন দাসের শুরুটা হয় দারুণ। এনামুলের সঙ্গে সম্ভাবনাময় এক জুটিও গড়ে ওঠে। কিন্তু যথারীতি সেই পুরোনো গল্প। দুজনই ব্যর্থ ইনিংসকে টেনে নিতে। অভিষিক্ত অলরাউন্ডার জশ ক্লার্কসনের শর্ট বল পুল করে বোলারের হাতেই ধরা পড়েন এনামুল (৩৯ বলে ৪৩)। একই বোলারের স্লোয়ার বাউন্সার বুঝতে না পেরে গ্লাভস ছুঁইয়ে আউট হন লিটন (১৯ বলে ২২)। এরপর মুশফিকুর রহিমও যখন আউট হলেন রিভার্স সুইপ খেলে, ম্যাচে বাংলাদেশের ক্ষীণ সম্ভাবনাটুকুও শেষ। রান রেট তখনও খারাপ নয়, ১৬.১ ওভারে রান ১০৩। কিন্তু উইকেট নেই ৫টি। বাংলাদেশ একমাত্র ফিফটি জুটি পায় এরপরই। দলে ফেরা আফিফ হোসেন শুরু থেকেই শট খেলতে থাকেন।

আরেকপাশে তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাট থেকেও আসে ভালো কয়েকটি শট। জয় তখনও অনেক দূরে, তবে কিছুটা হলেও ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান তারা। প্রয়োজন ছিল সেই গতিতেই আরও এগিয়ে যাওয়া। তা পারেননি কেউই। ২৭ বলে ৩৩ করে ফেরেন হৃদয়, ২৮ বলে ৩৮ আফিফ। জুটি শেষ হয় ৩৮ বলে ৪৬ রানে। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজের ২১ বলে ২৮ রানের ইনিংসে ২০০ পর্যন্ত যেতে পারে দল। শেষ দিকে শরিফুল ইসলাম এক দফায় আউট হয়ে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পর আবার তাকে ফেরানো হয় বলটি ‘নো’ ছিল বলে। সেই শরিফুলকে একটু পর অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ নিয়ে ফেরান উইল ইয়াং। ম্যাচে তাদের দাপটই তাতে প্রতিষ্ঠিত হয় আরেকটু। ম্যাচের শুরুটা সবার জন্যই ছিল হতাশার। টসের পর বৃষ্টি খেলা বন্ধ থাকে লম্বা সময়।

পরে ৪৬ ওভারে নেমে আসা ম্যাচের প্রথম বলটি লেগ স্টাম্পে হাফ ভলি করেন শরিফুল ইসলাম। অনায়াসেই তা বাউন্ডারিতে পাঠান ইয়াং। তৃতীয় বলে তিনি সিঙ্গেল নিয়ে অন্য প্রান্তে যেতেই দেখা যায় শরিফুলের অন্য রূপ। তিন বলের মধ্যে দুটি অসাধারণ ডেলিভারি বের হয় তার হাত থেকে। অফ স্টাম্প ঘেঁষা নিখুঁত সেই দুই ডেলিভারিতে শূন্য রানে আউট রাচিন রবীন্দ্র ও হেনরি নিকোলস। জোড়া উইকেট নিয়ে শরিফুল যখন লাফিয়ে উঠলেন, উড়ছে তখন বাংলাদেশ দলও। কিন্তু মাটিতে নামতে অপেক্ষা করতে হয়নি খুব একটা।

মুস্তাফিজুর রহমানের বলে স্লিপে ল্যাথামের ক্যাচ ছাড়লেন সৌম্য সরকার। পেশাদারি ব্যাটিংয়ে চাপ সরিয়ে জুটি গড়ে তুললেন ল্যাথাম ও ইয়াং। চতুর্দশ ওভারে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে ম্যাচ নেমে আসে ৪০ ওভারে। বৃষ্টির পরও ল্যাথাম ও ইয়াং এগোতে থাকেন সাবলিল ব্যাটিংয়ে। ৫৮ বলে ফিফটিতে পা রাখেন ল্যাথাম। জুটির শতরান আসে ১০৯ বলে। বিশতম ওভারে আবার বৃষ্টি। এবারের বিরতির পর ম্যাচের দৈর্ঘ্য আরও ছোট হয়ে নেমে আসে ৩০ ওভারে। ল্যাথাম ও ইয়াং নিজেদের করণীয়ও বুঝে নেন। দুই প্রান্তে ঝড় তোলেন দুজনই। বাংলাদেশ বিপাকে পড়ে যায় মূল বোলারদের কোটা আগেই প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায়। ২০ ওভারের মধ্যে হাসান মাহমুদের ৬ ওভার শেষ হয়ে যায়।

শরিফুল ও মুস্তাফিজের কোটার বাকি তখন স্রেফ এক ওভার করে। মেহেদী হাসান মিরাজের বোলিংয়ের সীমাবদ্ধতায় এই কন্ডিশনে কাজটা এমনিতেই তার জন্য কঠিন। বিশেষজ্ঞ বোলারের ঘাটতি থাকায় চাপ পড়ে সৌম্য সরকার, আফিফ হোসেনের ওপরও। তারা কেউই নিজের কাজটা করতে পারেননি ঠিকঠাক। ইয়াং-ল্যাথামের আক্রমণের সামনে খেই হারান সব বোলারই। রান বাড়তে থাকে তরতরিয়ে। রানের তেষ্টায়ই সম্ভাব্য সেঞ্চুরিটি হারান ল্যাথাম। বোল্ড হয়ে যান তিনি মিরাজকে স্লগ করার চেষ্টায়। ৮ রানের জন্য হাতছাড়া হয় অষ্টম ওয়ানডে সেঞ্চুরি।

ইয়াং তেমন কোনো ভুল করেননি। সৌম্যর এক ওভারে চার বাউন্ডারি, আফিফকে দুটি ছক্কা, মিরাজের চার ও ছক্কায় শতরানে পৌঁছে যান তিনি ৮২ বলে। ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে তার লাগে স্রেফ ২১ বল। আরেকপ্রান্তে কার্যকর ক্যামিও খেলেন মার্ক চ্যাপম্যান। জুটিতে ৫৪ রান আসে ৩.৪ ওভারে। ১১ বলে ২০ রান করে রান আউট হন চ্যাপম্যান। শেষ ওভারে ইয়াংসহ রান আউট হন তিন ব্যাটসম্যান। তবে রান ততক্ষণে বাংলাদেশের নাগালের বাইরে! ম্যাচের পরের ভাগেই প্রমাণিত হয়ে যায় তা। সিরিজের পরের ম্যাচ নেলসনে আগামী বুধবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৩০ ওভারে ২৩৯/৭ (ইয়াং ১০৫, রবীন্দ্র ০, নিকোলস ০, ল্যাথাম ৯২, চ্যাপম্যান ২০, ক্লার্কসন ১, ব্লান্ডেল ১, মিল্ন ১*; শরিফুল ৬-১-২৮-২, হাসান ৬-০-২৮-০, মুস্তাফিজ ৬-০-৪৭-০, সৌম্য ৬-০-৬৩-০, মিরাজ ৫-০-৫৩-১, আফিফ ১-০-১৭-০)।

বাংলাদেশ: (লক্ষ্য ৩০ ওভারে ২৪৫) ৩০ ওভারে ২০০/৯ (সৌম্য ০, এনামুল ৪৩, শান্ত ১৫, লিটন ২২, হৃদয় ৩৩, মুশফিক ৪, আফিফ ৩৮, মিরাজ ২৮*, শরিফুল ৫, হাসান ৪; মিল্ন ৬-০-৪৬-২, ডাফি ৬-০-৩৯-১, ও’রোক ৫-০-৩৫-১, সোধি ৬-০-৩৫-২, ক্লার্কসন ৪-০-২৪-২, রবীন্দ্র ৩-০-২০-১)

ফল: ডিএলএস পদ্ধতিতে নিউ জিল্যান্ড ৪৪ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ১-তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: উইল ইয়াং।