নিজস্ব প্রতিবেদক:
সব ধরনের খেলনা এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ওসব খেলনা বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এদেশের খেলনা খাতে এখন দেশী-বিদেশী কোম্পানিগুলোও আগ্রহী হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের যেসব কোম্পানি আগে থেকে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবসায় যুক্ত, ওসব প্রতিষ্ঠান এখন বড় বিনিয়োগে মনোযোগ দিচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগে রফতানিমুখী বেশকিছু প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ টয় মার্চেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড ইমপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশ-বিদেশে এখন সম্ভাবনাময় খেলনার বাজার। শুধু দেশেই স্মল ও বিগ টয়েস (ছোট-বড় খেলনা) মিলে সার্বিকভাবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি খেলনার বাজার। দেশের খেলনা এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তবে কিছু খেলনা এখনো আগের মতো বিদেশ থেকে আমদানিও হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ছোট্ট খেলনা থেকে শুরু করে বড় বড় গেমিং জোনের উপকরণ মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার ধরনের খেলনা রয়েছে। আবার আলাদা করে রফতানির জন্য বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানেও খেলনা তৈরি হচ্ছে। যা সরাসরি বিদেশের বাজারে চলে যাচ্ছে। তবে সবকিছু হিসেবে নিলে সার্বিকভাবে দেশের চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি খেলনা দেশেই তৈরি হয়। অবশ্য ছোট খেলনার তুলনায় বড় বড় খেলনা তৈরির সক্ষমতা এখনো অনেক কম। সেজন্য ছোট খেলনাগুলোর মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আমদানি হলেও বড় খেলনার প্রায় ৭০ শতাংশ এখনো বিদেশ থেকে আসছে। আবার রফতানির বড় অংশও ছোট খেলনা। দেশ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার খেলনা বিদেশে যাচ্ছে। গত কয়েক বছর সামগ্রিক প্লাস্টিক পণ্য রফতানির বাজার চাঙ্গা রেখেছে খেলনা।
সূত্র জানায়, খেলনা একটি শ্রমঘন শিল্প। বাংলাদেশে এ খাতে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি খেলনার বিশ্ববাজারের আকারও বিশাল। এদেশে মজুরি কম হওয়ায় বিদেশী খেলনা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে কারখানা করছে। সরকারের পর্যাপ্ত সহায়তা থাকলে এটি দ্রুতই অন্যতম রফতানি পণ্য হয়ে উঠবে। প্লাস্টিকের পুতুল থেকে শুরু করে নানান ধরনের গাড়ি, ফিশিং গেম, গিটার, রাইফেল, এ্যাম্বুলেন্স, মোবাইলসহ বিভিন্ন যন্ত্রের রেপ্লিকার মতো খেলনাগুলো এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। সেগুলো ঢাকার আশপাশে গড়ে ওঠা ছোট-বড় প্রায় ১৫০টি কারখানায় বানানো হয়। ওসব কারখানাই দেশের ছোট খেলনার প্রায় ৮০ শতাংশের সরবরাহকারী। ছোট খেলনার তেমন কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা বছরে অর্ধশত কোটি টাকার বেশি বিক্রি করে। গত এক দশকে সেগুলো ছোট কারখানা থেকে বড় শিল্প কারখানায় রূপ নিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের খেলনার বাজার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। ছোট খেলনার চেয়ে বড় খেলনার বাজার দ্রুত বাড়ছে। যা বছরে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। বিগ টয়েসের মধ্যে দেশে প্রচলিত উপকরণ শিক্ষামূলক খেলনা, চলাফেরা করা প্রাণী, ট্রাইসাইকেল, স্কুটার ও অন্যান্য চালানোর মতো গাড়ি, ব্লক ও প্যাজেল, স্পোর্টস আইটেম, ওয়াকার, ইনডোর ও আউটডোরের খেলনা উল্লেখযোগ্য। সেগুলোর অধিকাংশ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, গাজী গ্রুপের মতো বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী তৈরি করছে। আবার আমান প্লাস্টিকসহ কিছু প্রতিষ্ঠানও এখন বড় খেলনা বানাচ্ছে। বিগত ২০১৩ সাল থেকে দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ খেলনাসামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। ওসব খেলনা প্রাণের নরসিংদীর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে। যেখানে বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছোট-বড় খেলনা মিলিয়ে ৬২ লাখ পিস।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টয় মার্চেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড ইমপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহজাহান মজুমদার জানান, খেলনার বাজার এক দশক আগেও চীনের ছিল। তা এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। বাজারটি ভালোভাবে ধরতে পারায় দ্রুত এ খাতের বিকাশ হয়েছে। দেশীয় খেলনা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে মোট মার্কেট শেয়ারের ৭০ শতাংশ কব্জা করে ফেলেছে। বিশেষ করে প্লাস্টিকের খেলনার পুরোটা দেশের তৈরি। তার বাইরে বিভিন্ন মেটাল, কাপড়ের বা পুরো যন্ত্র টাইপের খেলনা আমদানি হচ্ছে। দেশে উৎপাদনের ফলে গত কয়েকবছরে খেলনার দাম অনেক কমেছে। ফলে কম দামে ভালো খেলনা মিলছে। আগে যা বিদেশ থেকে আনতে হতো। চীন থেকে ধারণা নিয়েই দেশে ওসব খেলনা তৈরি হচ্ছে। আর একসময় দেশে খেলনা আমদানির প্রয়োজন থাকবে না। উল্টো দেশের কোম্পানিগুলোই খেলনা রফতানি করবে বহুগুণ। খেলনা হবে দেশের আয়ের বড় উৎস। কারণ এদেশের খেলনা অনেক দেশের তুলনায় অনন্য।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ