নিজস্ব প্রতিবেদক:
আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার নিয়ে কঠোর অবস্থানে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীর ভেতরে অনেক স্থানেই অলিখিত আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল গড়ে ওঠেছে। আর আন্তঃজেলা ওসব কাউন্টার ও টার্মিনালের কারণে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। তাতে নগরবাসীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা থেকে অবর্নণীয় কষ্ট পোহাতে হয়। মূলত রাজধানীতে দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার ও টার্মিনাল। সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী এলাকায় বিশাল টার্মিনাল থাকলেও তার বাইরে গণপরিবহন রাস্তায় রাখা হয়। এমন পরিস্থিতিতে সড়কে সাধারণ মানুষের কষ্টের আবসান ঘটাতেই রাজধানীতে আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নগরবাসীকে যানজটের দুর্ভোগ থেকে রেহাই দিতেই বন্ধ করা হচ্ছে আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার। আশা করা হচ্ছে ঢাকার ভেতরে আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার বন্ধ হলে যানজট ও নগরবাসীর ভোগান্তি অনেকাংশেই কমে আসবে। আর সেজন্যই রাজধানীর ভেতরে আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার উঠিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল ছাড়া ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে কোনো আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার থাকতে দেয়া হবে না।
সূত্র জানায়, রাজধানীতে জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে আন্তঃজেলা বাস কাউন্টারগুলো। ওসব কাউন্টার ফুটপাথের একটা বিরাট অংশদখল করে আছে। ফলে ওসব স্থান দিয়ে লোকজন চলাচল করতে পারে না। আন্তঃজেলা বাসের কাউন্টার কারণে দিন দিন যানজট বেড়েই চলেছে। কাউন্টারগুলোর কারণে নগরীতে সাধারণ যনবাহনগুলো কোণঠাসা অবস্থায় চলতে হচ্ছে। তাতে সিটি সার্ভিসগুলো নিয়মিত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। সঠিক সময় নিয়ে সিটি সার্ভিসগুলো চলাচল করতে পারে না। দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসের কারণে রাজধানীর ভেতরের সড়ক যোগাযোগ নাজেহাল হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় যতো গাড়ি চলে তার ২৪ শতাংশ আন্তঃজেলা ও শহরতলির বাস। প্রায় ৪০ শতাংশ বাসের কাউন্টার শহরের ভেতরে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শহরের ভেতরে আন্তঃজেলা ও শহরতলির বাস চলাচল বন্ধে সরকার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোয় আন্তঃজেলা টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকায় গাড়ির চলাচল ও পার্কিংয়ের ব্যাপারে সজাগ থাকা প্রয়োজন। যানজট নিরসনে সরকার, পুলিশ ও পরিবহন মালিক সংশ্লিষ্টদের আগাম প্রস্তুতিও দরকার। যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে সবাইকে তৎপর হতে হবে। রাস্তারর মোড়গুলোতে গাড়ি যেন আটকা না পড়ে সে ব্যবস্থা করতে হবে। মোড়গুলোতে পুলিশকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস জানান, রাজধানীতে যে বাস টার্মিনালগুলো আছে সেগুলোর কার্যকারিতাকে ঠিকমতো বাস্তব রূপ দেয়া হচ্ছে না। বর্তমানে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সংস্কার চলছে। তা মার্চ মাসের মধ্যে শেষ হবে। মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালের যে সংস্কার প্রয়োজন আছে সেগুলোরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আগামী পহেলা এপ্রিল থেকে ঢাকা শহরে টার্মিনাল ব্যতীত আর কোথাও কোনো আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার রাখতে দেয়া হবে না। এখন দেখা যায় যার যেখানে ইচ্ছে সেখানেই কাউন্টার খুলে বসে আছে। তাতে যানজটের সৃষ্টি করে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। পয়লা এপ্রিল ২০২৩ এর পরে টার্মিনালের অভ্যন্তর ব্যতীত বাইরে কোথাও যত্রতত্র আর কোনো কাউন্টার রাখতে দেয়া হবে না। কাউন্টার না রাখলে সেখানে বাসও যেতে পারবে না, রাস্তাও ব্যবহার করতে পারবে না। সকলকেই টার্মিনাল ব্যবহার করতে হবে। টার্মিনালগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণেই বাস কাউন্টার সংলগ্ন এলাকায় যত্রতত্র রাস্তা দখল করে বাস রেখে দেয়া হয়।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানান, ডিএনসিসি বাস রুট র্যাশনাইলেজশনের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। কিন্তু টার্মিনালগুলোর সামনে বাসগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার ফলে সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। ১ এপ্রিল থেকে কোনো বাস রাস্তায় দাঁড়াতে পারবে না। টার্মিনালের বাইরে কোন বাস দাঁড়ালেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়াও জায়গায় জায়গায় ছাতার মতো টিকেট কাউন্টার থাকবে না। টার্মিনালের বাইরেও কোনো কাউন্টার থাকতে পারবে না।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক