জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরশহরে হিজড়াদের উপস্থিতি বেড়েছে। তারা দিনরাতে বেপরোয়া চলাফেরা করে সামাজিক শৃংখলা বিনষ্ট করছে। কঁড়া মেকআপ, খোলামেলা ড্রেসআপ আর অশ্লীল চলাফেরায় অতিষ্ট বিয়ানীবাজার জনপদের মানুষ।
হিজড়াদের টাকা তোলা নতুন কিছু নয়। আগে মানুষ যা দিত, তা নিয়েই খুশি থাকত হিজড়ারা। কিন্তু ইদানীং তাদের আচরণ বদলে গেছে। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাট, বিয়ের বর যাত্রীর গাড়ি ও কমিউনিটি সেন্টার গুলোতে চাঁদা নিতে প্রতিদিন ছোটে আসে তারা। যেখানে-সেখানে টাকার জন্য মানুষকে নাজেহাল করছে তারা।বিয়ানীবাজার পৌরশহরের নয়াগ্রামসহ দু’টি এলাকায় তারা বসবাস করে। এছাড়া প্রতিসপ্তাহে দলবেঁধে তাদের সহযোগীরা সিলেট শহর থেকে এখানে এসে টাকা-পয়সা তোলে। পৌরশহর ছাড়াও উপজেলার সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হিজড়া বাহিনী। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নামে বিভক্ত হয়ে সর্বত্র চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছে তারা। অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালসহ নানা অপকর্মে মেতে ওঠছে হিজড়ারা।
ট্রাফিক সংকেতে যানবাহন থামার পর হিজড়ারা সামনে এসে দাঁড়ালে যাত্রীদের কিছু করার থাকে না। তাদের সঙ্গে তর্ক করলে যাত্রীদের আরও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়।
হিজড়ারা বলে, গ্রামাঞ্চলে কিংবা জেলা শহরগুলোয় হিজড়াদের একঘরে হয়ে থাকতে হয়। তাই তারা পৌরশহরমুখী হয়ে ওঠেছে। হিজড়াদের উৎপাত এখন পাড়াগাঁয়েও চলে এসেছে। মুহূর্তের মধ্যেই উলঙ্গ হওয়া যেন এখন তাদের কাছে ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসহনীয় যন্ত্রণার মাঝে আছেন ভুক্তভোগীরা।
দেশে হিজড়ারা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে পরিচিত। সরকার কর্তৃক তাদের ২০১৩ সালে হিজড়া হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং ২০১৪ সালে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে সরকার হিজড়াদের নিয়ে নানা কর্মসূচি এবং সুযোগ সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। শুধু তাই নয়, তাদের দেওয়া হয়েছে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার অধিকার। কিন্তু তারা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার সুযোগের অপব্যবহার করছে। মানুষ সাধারণত চলাফেরার জন্য দৈনন্দিন বাস, ট্রেন কিংবা লঞ্চে যাতায়াত করে থাকে। আর সেখানেই তাদের হিজড়াদের হয়রানির কবলে পড়তে হয়। বকশিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে হিজড়ারা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। কেউ টাকা প্রদানে অনিচ্ছুক হলে কথিত হিজড়াদের ব্যবহার এতটা হিংস্র পর্যায়ে চলে যায়, যা খুবই বিব্রতকর ও অপমানজনক। সাধারণ মানুষ অনেক সময় আত্মসম্মান রক্ষায় তাদের হাতে টাকা তুলে দেয়।
তারা বলছে, টাকা না তুলে তারা নিরুপায়। তাদের আয়-রোজগারের কোনো সুযোগ নেই। বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছে। ইদানীং কিছু নকল হিজড়ার কথাও বলছে অনেকে, যারা মূলত পুরুষ কিন্তু হিজড়া সেজে টাকা আদায় করছে।
হিজড়াদেরকে ‘বিরক্তি’ বা ‘আতঙ্ক’ হিসেবে দেখেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুস্কিল। কিন্তু কেন হিজড়ারা এমন জীবন বেছে নেন? সেটি কি কখনো ভেবেছেন?
পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সবখানে তারা কেবল অপমান, উপহাস, তাচ্ছিল্য আর নিগ্রহের শিকার। বিয়ানীবাজারে বসবাসরত সুমী হিজড়া বলেন, হিজড়াদেরকে বাংলাদেশ সরকার তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু হিজড়াদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কোনো বদল হয়নি। এই সমাজে তারা অচ্ছুৎ। তাদের কাগুজে কিছু অধিকার আছে বটে। কিন্তু বাস্তবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় তারা অবহেলিত। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের সম্মিলিত অনুদারতাই তাদেরকে অভিশপ্ত করে রেখেছে।
বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মুকিত মোহাম্মদ বলেন, রাতে হিজড়ারা কঁড়া মেকআপ করে অশ্লীলভাবে শহরে ঘুরাফেরা করে। এতে অনেক ওঠতি বয়সি তরুণ বিপথগামী হতে পারে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি