নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে চাহিদা চেয়ে আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় সমস্যায় পড়ছে চাষী ও ব্যবসায়ীরা। এবছরও দেশে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে নতুন আলু উঠছে। অথচ এখনো রয়ে গেছে গত বছর কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলু। দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা ৮৫ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ লাখ টন। গতবছর (২০২১-২২ মৌসুম) এক কোটি ১০ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছিল। রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়েছে। কিন্তু প্রায় প্রতি বছরই আলুর উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হচ্ছে। তাতে চাষী ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের শঙ্কায় থাকে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আপাতত রপ্তানি বাড়ানোয় সমাধান খুঁজছে। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাজারে দ্রুত কমে আসছে আলুর দাম। মূলত চাহিদার চেয়ে বাড়তি উৎপাদনের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। চাষীরা আগাম আলুতে প্রত্যাশিত ফলন পেলেও বাজারে কাক্সিক্ষত দাম পাচ্ছে না। গত মৌসুমে এই সময় চাষীরা ক্ষেত থেকেই প্রতি কেজি আগাম জাতের গ্যানুলা ও ডায়মন্ড আলু ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও এ বছর ওই আলু ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম। অথচ প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন ১০ টাকারও বেশি খরচ পড়েছে। যদিও আগাম আলু আবাদে খরচ বেশি হলেও বাজারদরে তা পুষিয়ে যায়। কিন্তু এবার লোকসান হচ্ছে। প্রতিদিন আলুর দাম মণে কমছে ৫০-৬০ টাকা। খুব তাড়াতাড়ি পড়ে যাচ্ছে আলুর বাজার।
সূত্র জানায়, এখনো শেষ হয়নি কোল্ড স্টোরেজে গত মৌসুমের আলুর মজুত। আর নতুন আলু আসার পর সেগুলোর দামও পড়ে গেছে। ফলে চাষীরা কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষিত আলু তুলছে না। কোল্ড স্টোরেজে সাধারণত ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত আলু সংরক্ষণ করা যায়। ওই হিসেবে গত মৌসুমের আলু নভেম্বরের পর আর স্টোরেজে রাখা সম্ভব হয় না। ডিসেম্বরে নতুন আলু উঠতে শুরু করে তা ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে। কিন্তু এখনো উদ্বৃত্ত আলু থাকায় স্টোরেজগুলোতে নতুন আলু সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন আলু রপ্তানি, ত্রাণ ও রেশনিং কার্যক্রমে আলুর ব্যবহার এবং আলুতে ভর্তুকি দাবি করে আসছে। সংগঠনটি কাবিখা, ভিজিএফ, ভিজিডি এবং ওএমএসের পাশাপাশি জাতীয়ভাবে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, এতিমখানা, জেলখানাসহ বিভিন্ন স্থানে আলু বিতরণের দাবি করেছে। একই সঙ্গে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি ও কোল্ড স্টোরেজের মালিকদের ঋণ পুনঃতফসিলের দাবি করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয় বাড়তি আলু নিয়ে সমস্যা সমাধানে রপ্তানি বৃদ্ধিই সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ মনে করছে। ওই লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। তাতে আলু রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়। রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করা গেলে আলু রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০২২ সালের মধ্যে ৮০ হাজার টন, ২০২৩ সালে ১ লাখ ২০ হাজার টন, ২০২৪ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার টন এবং ২০২৫ সালে ২ লাখ ৫০ হাজার টন আলু রপ্তানি করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে রপ্তানির প্রথম বছরের টার্গেট সফল হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশ থেকে মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৮০ হাজার টন গোল আলু রপ্তানি হয়েছে। তবে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে যে পরিমাণ আলু উদ্বৃত্ত থাকে ওই তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ খুবই সামান্য।
এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, হিমাগারগুলোতে এখনো দেড় লাখ বস্তা আলু রয়েছে। ওই আলুর দাম পড়ে গেছে। কেউ নিচ্ছে না, কৃষকরাও ওঠাচ্ছে না। মুন্সিগঞ্জে প্রতি কেজি কোল্ড স্টোরেজের আলুর দাম ৫/৬ টাকায় নেমেছে। সেজন্য ভাড়া পরিশোধ করে আলু নিলে কৃষকের লোকসান হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও মজুত আলু নিয়ে বিপদে রয়েছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, উদ্বৃত্ত আলু সমস্যা। সার্বিকভাবে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। রপ্তানির পরিমাণ কম হওয়ার বড় কারণ হলো রপ্তানি উপযোগী মানসম্মত আলু এদেশে তেমন উৎপাদিত হচ্ছে না। সেজন্য টেকসই কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গুণগত মানসম্মত আলু উৎপাদনের জন্য কৃষকদের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে মানসম্মত আলু উৎপাদন। তাছাড়া আলু দিয়ে তৈরি নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ ভোগ বাড়াতেও কার্যক্রম চলছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি