নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবিরে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানলে টেকনাফের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে শিবিরের নিকটবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়। কক্সবাজার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা নয়ন জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সে লক্ষে কাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক, রেডক্রিসেন্টসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনাবাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও পুলিশ সেখানে সমন্বিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগের জরুরি মেডিকেল টিম ও মোবাইল মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তাৎক্ষনিক কাজ করবে ‘সাইট ম্যানেজমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ’। তিনি আরও বলেন, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জরুরিভাবে সরবরাহের জন্য ত্রিপল, বাঁশ, সুতলি দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ভূমিধস কিংবা বন্যা দেখা দিলে সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব কক্সবাজার দৃশ্যমান হওয়া শুরু করেছে। আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ তথ্য মতে এখনও ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত হলেও শুক্রবার (১২ মে) বেলা ২ টা ৪০ মিনিট থেকে ৩ টা ১০ মিনিট পর্যন্ত মাঝারি মানের বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা রয়েছে। এরপর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তবে এখনও বাতাসের তীব্রতা লক্ষ্য করা যায়নি। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানিয়েছেন, মোখার প্রভাবে মাঝারি মানের এই বৃষ্টিপাত, তা থেমে থেমে আবারও হতে পারে। এদিকে মোখার কারণে সাগর স্বাভাবিক পরিস্থিতির চেয়ে একটু উত্তাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন, সৈকতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর। তিনি বলেন, পর্যটকদের সতর্ক করতে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে।
আর পর্যটকদের হাঁটু পানির নিচে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের নির্দেশনা মতে ৪ নম্বর সংকেত হলে সৈকতের পানিতে নামা বন্ধ করা হবে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, প্রশাসন জনগণের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সজাগ রয়েছে। দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ২৫ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে। যার মধ্যে ১০ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ৫.৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩.৫ মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, ৩.৪ মেট্রিক টন শুকনা কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন ও ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ১০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক। অবস্থার বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আনা হবে। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দার আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি