বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে আইনি বাধা ও তার ভিত্তি নিয়ে পর্যালোচনা করছে দলটি। এ বিষয়ে দল সমর্থিত আইনজীবী ছাড়াও অন্যান্য সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে দলটির শীর্ষ নেতারা কথা বলছেন। পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন-এরকম নজিরও খুঁজছে দলটি।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের আবেদন নাকচ হওয়ার পর এ উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।
অন্যদিকে আইনগতভাবে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা নেয়া, বিগত সময়ে এ সুবিধা গ্রহণকারীদের বিষয়গুলোসহ বিএনপি চেয়ারপারসনের করোনার জাল প্রতিবেদন ইস্যুতে দলের অবস্থান তুলে ধরতে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এতে বক্তব্য রাখবেন।
এর আগে গত রোববার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ও দণ্ডাদেশ স্থগিত করে যেভাবে তাকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তাতে এখন আর তাকে বিদেশে যেতে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে এ সিদ্ধান্তকে নজিরবিহীন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে বিভিন্ন দল ও সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে।
সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসায় সরকারের অনুমতি না দেয়ার বিষয়ে তার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারাতে দণ্ড স্থগিতের সুবিধা দেয়া হয়েছে। সেই সুবিধা অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারতো। কারণ আইনের কোথাও চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া যাবে না এমন বিধান নেই।
আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী কোন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা কোন শর্ত ছাড়া অথবা শর্ত সাপেক্ষে সরকার স্থগিত করতে পারে। এ ধারা অনুযায়ী আরও কিছু শর্ত পরিবর্তনও করতে পারে। সে অনুযায়ী যেকোন স্থানে, দেশে অথবা বিদেশে এই শর্ত জুড়ে দিয়ে সাজা স্থগিত বা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারে। শর্ত পরিবর্তন করা যাবে না- এটা আইনের ভুল ব্যাখ্যা।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিদেশ যেতে পারবে না বলে সরকারের দিক থেকে যে বক্তব্য দেয়া হচ্ছে- তা সঠিক নয়। তাহলে সাজাপ্রাপ্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত মুহাম্মদ নাসিম কীভাবে ২০০৮ সালে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েছিলেন? স্বাধীনতার পর থেকে সাজাপ্রাপ্ত হয়েও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন- এরকম বহু নজির রয়েছে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, সরকারের মনোভাবে প্রথমে মনে হয়েছিল- খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেবে। পরিবারের সদস্যরাও আশাবাদী ছিলেন। দেশের মানুষও সরকারের মনোভাবকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছিল। কিন্তু হঠাৎ সরকারের সিদ্ধান্তে বিএনপিসহ দেশের মানুষও হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছে। এখন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্মদিন নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত খালেদা জিয়ার তৃতীয় নমুনা টেস্টের প্রতিবেদনে তার জন্মদিন ১৫ আগস্ট থাকলেও তা জাল করে ৮ মে করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। খালেদা জিয়াকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে সরকার।
এদিকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি ও তার জোট নেতারা বলেন, খালেদা জিয়া আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার অনুমতি না দেয়ার বিষয়কে যতটা আইনি দিক রয়েছে, তার চেয়ে সরকার রাজনীতি বেশি করেছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপির সভাপতি কর্ণেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম ও মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ যৌথ বিবৃতে বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা না দিয়ে তার ওপর সরকার অন্যায়-অবিচার করেছে। তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা।
এছাড়াও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আহসান হাবীব লিংকন। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা বেশ সঙ্কটাপন্ন। বর্তমান সরকার তার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
এলডিপি’র একাংশের মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অতীতেও এরুপ মানবিকতার নজির সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
এছাড়াও খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির চেয়ারপারসন নন; তিনি বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী। গুরুতর অসুস্থ হলেও তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়াটা বেদনাদায়ক, অমানবিক ও নজিরবিহীন ঘটনা।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২