অনলাইন ডেস্ক :
ভয়াবহ দাবানলের কারনে শহরটি ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে শত শত মানুষ। কানাডার উত্তরাঞ্চলীয় ইয়েলোনাইফ শহরের দিকে দ্রুত ধেয়ে আসছে ভয়াবহ দাবানল। তবে শহরের অধিবাসীরা উদ্ধারকারী উড়োজাহাজে আরোহণ করতে না পারায় অনেক ক্ষুব্ধ। খবর বিবিসির। গত বৃহস্পতিবার যারা দীর্ঘ সময় ধরে বিমানে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাদের কর্মকর্তারা আবারও শুক্র বা শনিবার চেষ্টা করতে বলেছেন। একইসঙ্গে দেশটির বড় দুটি এয়ারলাইন্সও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে ভাড়া ও টিকেট পরিবর্তন ফি বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে। গত বৃহস্পতিবার নাগাদ দাবানলের অবস্থান ছিল ইয়েলোনাইফের ১৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে। আগামীকাল শনিবার নাগাদ এই আগুন শহরের কাছাকাছি চলে আসতে পারে।
পুরো উত্তর-পশ্চিম ভূখন্ডে অন্তত ২৪০টি দাবানল তৈরি হয়েছে এবং এটি তার একটি। এ কারণে মঙ্গলবার সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ওই অঞ্চলটি অনেক বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ। ইয়েলোনাইফে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করে। এদের সবাইকে শুক্রবার (১৮ আগষ্ট) সকালের মধ্যে শহর ছাড়তে বলা হয়েছিলো। গত বৃহস্পতিবার উদ্ধারকারী বিমানে ওঠার জন্য যেখানে নাম রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছিল সেখানে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। স্থানীয় একটি স্কুলের বাইরে এ কার্যক্রম চলছিল।
হালকা বৃষ্টির মধ্যেই পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা লোকজনকে সহায়তা করছিলেন ও তাদের হাতে খাবার ও পানি তুলে দিয়েছেন। তবে স্থানীয় সময় দুপুরের মধ্যে সরকারের কমিউনিকেশন বিভাগের ডিরেক্টর অ্যামি কেনেডি জানান ৪০০ এর বেশি মানুষ শহর ছাড়ার সুযোগ পাচ্ছে না। কেনেডি নামে একজন লিখেছেন, আমরা বুঝতে পারছি কয়েক ঘণ্টা ধরে যারা লাইনে অপেক্ষমাণ আছে এবং যাদের কাল আবার লাইনে দাঁড়াতে হবে, তাদের জন্য বিষয়টি হতাশার। তিনি জানান, যারা হাঁটতে অক্ষম ও প্রতিবন্ধী তাদের অপেক্ষমাণ লাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওদিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার (১৮ আগষ্ট) ২২টি ফ্লাইটে করে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে এবং তাতে ১৮শ’ মানুষ সুযোগ পাবে। তাদের মতে অন্তত ৫ হাজার মানুষকে বিমানে করে ইয়েলোনাইফ থেকে সরিয়ে নেওয়ার দরকার হবে।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এয়ার কানাডা ও ওয়েস্টজেট বিমান সংস্থার সমালোচনা করছে এর মধ্যে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে। তবে এয়ার কানাডার মুখপাত্র সিবিসি নিউজকে বলেছেন, সরাসরি পরিচালিত ফ্লাইটগুলোর ভাড়া নির্ধারিত আছে এবং শহরটিতে এই বিমান সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম দ্বিগুণ করেছে। কিন্তু ‘আগুনের কারণে বিমান উড্ডয়নের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে’ এবং সে কারণে শনিবারের কিছু ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ওয়েস্টজেট বলছে, ভাড়া বাড়ানো ঠেকাতে তারা দাম সমন্বয় করছে। একইসঙ্গে আগামী পাঁচদিন যারা ইয়েলোনাইফ শহর থেকে যাত্রা করবে তাদের রিশিডিউল ফি বাতিল করছে। অন্য বিমান সংস্থাগুলোকেও শহর ছাড়তে আগ্রহী লোকজনকে সহায়তা করতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, শহরের মেয়রের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে তিনি যোগাযোগ রাখছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ এ তিনি লিখেছেন, এখনও সামনের দিনগুলোতে যথাযথ সহযোগিতা দেয়ার বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকারের বিষয়টি আমি পুনর্ব্যক্ত করছি। প্রায় ৪৬ হাজার মানুষ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে। ওই অঞ্চলের ইতিহাসে বিমান নির্ভর উদ্ধারের ঘটনা এটি সবচেয়ে বড়। ফোর্ট স্মিথ, হ্যা রিভার, এন্টারপ্রাইজ ও জিন ম্যারি রিভার কমিউনিটিগুলো এভাকুয়েশন আদেশের আওতায় আছে। হ্যা রিভারের ১৩০ কিলোমিটার দুরে কাকিসা কমিউনিটি আছে যেখানে ৪০ জনের মতো ব্যক্তি আছে সেটিও এই আদেশের আওতায় পড়েছে। কানাডা এবার সবচেয়ে মারাত্মক দাবানল মৌসুম পার করছে। দেশজুড়ে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১১শ দাবানল সক্রিয় আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে যা দাবানল বাড়িয়ে তুলছে। সুত্র : এসআর
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২