নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাইক্রোক্রেডিটের (ক্ষুদ্রঋণ) নামে সারাদেশে অনিবন্ধিত সুদের ব্যবসা পরিচালনাকারী (সমবায় সমিতি ও এনজিওর) প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, তালিকা করতে গিয়ে যদি ওই সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের কার্যক্রমও বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে অননুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যকক্রমের বিষয়ে তদন্ত করতে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া ঋণদানকারী স্থানীয় সুদকারবারিদের তালিকা দিতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের আদেশ প্রতিপালন করে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে এসব বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে সংশ্লিষ্টদের বলেছেন আদালত। এছাড়াও রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে লাইসেন্স এবং অনুমোদন ছাড়া ক্ষুদ্রঋণদানকারী বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও তদারকিতে বিবাদীদের নীরবতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ৩০ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। মাইক্রোক্রেডিটের (ক্ষুদ্রঋণ) নামে সারা দেশে চড়া সুদে ঋণদাতা মহাজনদের চিহ্নিত করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক। সুদকারবারিদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানিতে প্রতারিত মানুষের অবস্থা তুলে ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ নিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একই ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানি হয়। পরে এ বিষয়ে আদেশের জন্য ২৭ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় এই আদেশ দেন আদালত। এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ক্ষুদ্রঋণের নামে সুদের ব্যবস্থা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়। ‘চড়া সুদে ঋণের জালে কৃষকেরা’ শিরোনামে গত ২৮ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে জনস্বার্থে গত ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ রিট করেন। রিট আবেদনে সারাদেশের সুদ ব্যবসায়ীদের তালিকা চাওয়া হয়। এ ছাড়া চড়া সুদে অনানুষ্ঠানিকভাবে মহাজনদের ঋণ দেওয়া রোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা/ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা এবং সারাদেশে চড়াসুদে ঋণ বিতরণ কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল জারির নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে। রিটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ৬৪ জেলার ডিসি ও এসপিকে বিবাদী করা হয়। আদেশের বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, অননুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের বিষয়ে তদন্ত করতে একটি বিশেষ কমিটি গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে তদন্তকালে কোনো অননুমোদিত বা লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে সেগুলো বন্ধ করে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এ ছাড়া ঋণদানকারী স্থানীয় সুদকারবারীদের তালিকা দিতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম