November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, December 5th, 2022, 7:35 pm

ঝিনাইদহে শীতের আমেজে ঘরে ঘরে ‘কুমড়ো বড়ি’ তৈরির হিড়িক

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে শীতের আমেজে ঘরে ঘরে ‘কুমড়ো বড়ি’ তৈরির হিড়িক পড়েছে। প্রতিটি পরিবারে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারীরা।

চলছে কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করছেন অনেকেই। আবার অনেকে শীতকালে কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে সংসার চালান।

জানা গেছে, মাষকলাইয়ের ডাল করার পর তা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর সেই ডাল ভালো করে পরিষ্কার করে শিল-পাটায় বেটে কিংবা মেশিনে ভাঙিয়ে তার সঙ্গে চাল কুমড়োর পুর মিশিয়ে সুস্বাদু বড়ি তৈরি করা হয়। গ্রামীণ ৮০ ভাগ নারীরা পালা করে বড়ি দেয়ার কাজ করে থাকেন।

উপজেলার বহরমপুর গ্রামের গৃহবধূ পারভীনা খাতুন বলেন, আমার স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। তিনি কুমড়োর বড়ি খুব পছন্দ করেন। এই মাসের শেষের দিকে ছুটিতে বাড়িতে আসবে। তাই আগে থেকেই বড়ি তৈরি করে রাখতে হচ্ছে। বিদেশ থেকে ফোন করে জানিয়েছে বেশি করে তৈরি করতে, এক মাস পরে আবার যাওয়ার সময় বিদেশি বন্ধুদের জন্য নিয়ে যাবে।

রুবিনা খাতুন বলেন, আমার স্বামী দুই বছর আগে মারা গেছেন। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। এক ছেলে,এক মেয়ে। বাপ মারা যাওয়ার পারে মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে ছোট অন্যান্য সময় বিভিন্ন কাজ করি। শীতকালে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বিক্রি করি। চাল কুমড়ো পাওয়া না গেলে পেঁপে, লাউ ছাড়াও বিভিন্ন সবজি ও কলাই দিয়ে বড়ি তৈরি করি।

পৌর এলাকার স্বপ্না খাতুন বলেন, বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর চালকুমড়ো ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহি করে রাখতে হয়। তারপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। পরে ডালের পানি ছেঁকে শিল,পাটায় বেটে নিতে হয়। এরপর ডালের সঙ্গে কুমড়ো মেশাতে হবে। খুব ভালো করে মেশাতে হবে যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়। তারপর কড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হবে। বড়ি তিন থেকে চারদিন এভাবে রোদে শুকানোর পর তা অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।

শাহিন নামে পৌর শহরের এক মুদি ব্যবসায়ী জানান, মুদি ব্যবসার পাশাপাশি শীত এলেই কুমড়োর বড়ি বিক্রি করি। শীতকালে বড়ি তৈরির জন্য অনেকেই চাল কুমড়োর আবাদ করেন। গেল বছর একটু কম দামে বিক্রি হলেও এবার দাম বেড়েছে। বড়ি তৈরির উপকরণ ও শ্রমমূল্য বৃদ্ধির কারণে বড়ির দামও বেড়েছে।

সরকারি কে এম এইচ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আনিসুর রহমান বলেন, গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যের মধ্যে কুমড়োর বড়ি অন্যতম। শীতকালে কুমড়োর বড়ি তৈরি না করলেই যেন নয়। এটি যেমন মুখরোচক তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। নারীরা পালা করে বড়ি তৈরি করে থাকে। এতে প্রতিবেশীদের মধ্যে যেমন সম্পর্ক দৃঢ় হয়। বড়ি তৈরি করে বিভিন্ন আত্মীয়র বাড়িতে পাঠিয়ে থাকে অনেকে।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শিলা বেগম বলেন, নারীরা বিভিন্ন কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। বিশেষ করে শীত এলেই এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে কুমড়ো বড়ি তৈরির উৎসব চলে। এক সময় পরিবারের প্রয়োজনে কুমড়ো বড়ি তৈরি করা হলেও এখন বাণিজ্যিক হয়ে গেছে। আবার এখন নারীরা অনলাইনের মাধ্যমে শহরে কুমড়ো বড়ির অর্ডারের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

—ইউএনবি