November 23, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, January 5th, 2022, 7:51 pm

কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু: ছাত্রলীগের সম্পাদকসহ চার শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার

ফাইল ছবি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ জন ছাত্রকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ চারজনকে কুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার আনিসুর রহমান ভূঞা এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

শিকক্ষ সেলিম হোসেনকে বাসায় যেতে না দিয়ে অফিসে বসতে বাধ্য করায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের বা আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও কুয়েটে ছাত্র রাজনীতির ওপর কতিপয় বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এর আগে সকাল ৯টায় ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির মূলতবি সভায় শাস্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।

কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার আনিসুর রহমান ভূঞা জানান, পাচঁটি ধাপে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে আজীবন বহিষ্কৃতদের মধ্যে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান, হাসান আব্দুল কাইয়ূম, মো. কামরুজ্জামান ও রিয়াজ খান নিলয়।

দ্বিতীয় ধাপে সাতজন শিক্ষার্থীকে দুই শিক্ষাবর্ষ এবং আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন- তাহমিদুল হক রিয়াজ, মাহমুদুল হাসান, সাদমান সাকিব, মাহিম মুনতাসির, এএসএম রাগিব আহসান, মীর জামিউর রহমান ও রুদ্রনীল সিংহ শুভ।

তৃতীয় ধাপে একজন শিক্ষার্থীকে এক শিক্ষাবর্ষ এবং আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। অভিযুক্ত ছাত্রের নাম আনিকুর রহমান।

চতুর্থ ধাপে ২২ জনকে এক শিক্ষাবর্ষ বহিষ্কার করা হয়েছে এবং পঞ্চম ধাপে আরও ১০জন ছাত্রকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা তবে, এই শাস্তি এখন কার্যকর হবে না। ভবিষ্যতে কোন ধরণের নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে এই শাস্তি কার্যকর করা হবে বলেও উল্লেখ করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার আনিসুর রহমান ভূঞা।

উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর বিকেলে মারা যান অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ড. সেলিমকে চাপ দিয়ে আসছিলেন ফজলুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের রাস্তায় ড. সেলিমকে জেরা শুরু করেন। পরে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা তার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

ব্যক্তিগত কক্ষ থেকে বেরিয়ে ড. সেলিম দুপুরের খাবার খেতে ক্যাম্পাস থেকে নিজ বাসায় যান। দুপুর আড়াইটার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অভিযোগ ওঠে, দাপ্তরিক কক্ষে কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্রের জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে ড. সেলিমের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনা তদন্তে দুই দফায় কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে ২ ডিসেম্বর দুপুরে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।

ড. সেলিমের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনায় ৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। নতুন করে গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের নতুন তদন্ত কমিটি। কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হলেও ওই সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি কমিটি।

গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পাঁচ কর্মদিবসে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ওই সভায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) হল ৭ জানুয়ারি খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইসঙ্গে ৯ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

—ইউএনবি